ঝকঝকে শহরের আড়ালে থাকা অন্ধকারের জীবন
ভারতের ব্যস্ততম শহরের রাস্তা-ঘাট, নর্দমা, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করে যাচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী। যারা এ পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন তাদের প্রায় সবাই দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। একসময় তাদের ডাকা হত ‘অস্পৃশ্য’ কিংবা অচ্ছুত নামে। ময়লা সংগ্রহ, শহরের রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেয়া, নর্দমা পরিষ্কার, ময়লার ট্রাকে ময়লা তুলে দেয়া-অর্থাৎ সমাজে যে কাজগুলোকে ‘অশুচি’ বলে বিবেচনা করা হয় সেই কাজগুলোই করে থাকেন এ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। খেটে খেটে যারা মুম্বাই শহরকে ঝকঝকে করে তোলেন, তাদেরই হতে হয় নানা বঞ্চনার শিকার। যাপন করতে হয় অন্ধকারের জীবন। এক বছর ধরে সমাজের নিষ্পেষিত এবং ‘অস্পৃশ্য’ সেইসব মানুষকেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন ফটোগ্রাফার সুধারাক ওলভে। সেইসব ছবিতে উঠে এসেছে ‘অচ্ছুত’ মানুষের কষ্টকর জীবন-যাপন।
সুধারাক ওলভের ক্যামেরায় উঠে আসা ভারতীয় দলিত সম্প্রদায়ের জীবন গাঁথা নিচে তুলে ধরা হল-
প্রতিদিন মুম্বাই শহরে ৭ হাজার টন ময়লা জমে
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরকে প্রায়সময়ই নর্দমায় নেমে ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। কিছু কিছু ড্রেনেজ সিস্টেমের লাইনগুলো এত বেশি গভীর যে সেখানে চাইলে একটি দ্বিতল বাসও বসিয়ে ফেলা যাবে। এক ঘণ্টা কিংবা তার খানিকটা বেশি সময় কাজ করার পর যখন কোন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নর্দমা থেকে বের হয়ে আসেন, তখন তারা রীতিমত কাঁপতে থাকেন। এ কাজটির জন্য তথাকথিত বিশেষ কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। কেবল প্রয়োজন হয় এক জোড়া হাত, এক জোড়া পা এবং ‘নরকে’ ঝাঁপিয়ে পড়ার মত সাহস।
এ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজটিই দেখুন না। দেখে মনে হয় খুব সহজ, কিন্তু আদতে তা কতটা কঠিন! এ পরিচ্ছন্নতা কর্মীটি বিশাল এ ব্রিজ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করছেন ভারি একটি ঝাড়ু। তা দিয়ে টেনে টেনে ছোট ছোট পাতাগুলোকে এ জায়গায় জড়ো করছেন। এরকম করে ৩০-৪০টি স্তূপ জড়ো করতে হয় তাকে। আর এভাবে জড়ো করার কাজটি তাকে খুব দ্রুত করতে হয় তাকে। নাহলে যে বাতাসে উড়ে যাবে সেগুলো। সব কষ্টই বৃথা হয়ে যাবে!
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রতিদিন যে ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে হয় তারমধ্যে থাকে-জীব-জন্তুর মৃতদেহ, উচ্ছিস্ট খাদ্য, হাসপাতালের আবর্জনা, পাথর, গ্লাস ভাঙা, স্টিলের তার এমনকি ব্লেড।
অনেকটা খালি হাতে ময়লা সংগ্রহ এরপর পিঠে করে তা বয়ে নিয়ে যাওয়া। অনেক বছর ধরে কঠিন এ কাজটি করে আসছেন যাদব। নিজের কাজের ব্যাপারে খুব একটা কথা বলতেও পছন্দ করেন না তিনি। কখন না আবার ময়লাভর্তি কাঠের ঝুড়িটি কাঁধে নিয়ে যখন চলেন তখন ব্যথা পান কিনা এমন প্রশ্নে কেবল মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
শহরের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে পাঁচটি ময়লা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে রয়েছে। এগুলোর সবগুলোই সক্ষমতা হারিয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোর কোনটিতেই ছোটখাটো ক্যান্টিনের ব্যবস্থা নেই। নেই আলাদা কোন কক্ষ, যেখানে কর্মীরা কাপড়-চোপড় পাল্টাতে কিংবা বিশ্রাম নিতে পারেন।
এ চাকরির বদৌলতে কর্মীদের মেলে একটি ছোট থাকার ঘর। কিন্তু সেইসব ঘরগুলোর বেশিরভাগই কয়েকটি পরিবারের মধ্যে শেয়ার করে নিতে হয়। রেখা টেনে টেনে নির্ধারিত হয় তাদের বসবাসের এলাকা।
হিরামন নামের এ পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংসার চালানোর জন্য দিতে পারেন মাত্র ১৫০ রুপি। এরইমধ্যে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছেন তিনি। যদি কোন কর্মী মারা যান তবে তার পরিবারের প্রতি দয়া দেখিয়ে তার স্ত্রীকেও দেয়া হয় একই কাজ।
মন্তব্য চালু নেই