জাতীয় সংসদের সামনে “বিনা পুঁজির ব্যবসা”!

“আপনি পুরুষ মানুষ, আপনার সাথে সারাদিন কথা বললেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না, তবে ওদের সাথে কিছু বললেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে”। আধুনিক স্থাপত্য নক্সার এক অপূর্ব নিদর্শন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা ঠিক এভাবেই জানালেন সংসদের সামনে ভাসমান পতিতা ব্যবসা নিয়ে।

বাংলাদেশের সংসদ ভবন। অসাধারণ এক রুপ নিয়ে ভার বইছে গোটা বাংলাদেশের। তার প্রান ফিরে আসে বছরের কয়েকবারের অধিবেশনের সময়। তবে সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাত যেন প্রতিদিন বিকাল থেকেই সরগরম। সন্ধ্যা হলেই আধো আলো ছায়াতে প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলরা অনেকটা ভাবনা চিন্তার একটু বাইরেই চলে যায়। একটু আলোতে আবার দেখা মেলে সাধারণ কিছু মানুষের যারা আসেন মুক্ত হাওয়ায় অজানা শুদ্ধ বাতাসে একটু গল্পে মেতে উঠতে।

সংসদ ভবন এলাকার ফুটপাতকে মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করা যায়, যার একপ্রান্ত খামার বাড়ি এলাকা থেকে শুরু এবং অন্য প্রান্তের শেষ মানিক মিয়া এভিনিউ এর দিকে। মাঝখানে কিছু জায়গায় দেখা মেলে বেলা শেষে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষ , যারা কিছুটা উন্মুক্ত পরিবেশেই থাকে। আর সংসদের বেড়ার গা ঘেঁসে বসে থাকে প্রেমিক যুগল। তবে খামার বাড়ি থেকে সংসদের দিকে যেতে থাকলেই দেখা মিলবে কতিপয় যুবতী এবং মধ্যবয়স্ক নারী। অনেকটা ভাসমান পতিতা বলেই পরিচিত তারা।

বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান সংসদ ভবনের সামনে খোলামেলা ভাবেই ঘুরে বেড়ায় এসকল ভাসমান পতিতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও দেখা মেলে না কঠোর পদক্ষেপের। এছাড়া এইসকল ভাসমান পতিতারা মূলত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরা যে স্থানে অবস্থান করে, সেখানেই মূলত রিক্সা কিংবা সিএনজির দেখা মিলবেই। কারন এই সকল রিক্সা কিংবা সিএনজির চালকরাও এই সিন্ডিকেটেই কাজ করে চলছে।

পবিত্র রমজান মাসেও থেমে থাকেনি এই ভাসমান পতিতা ব্যবসা। হরহামেশায় চলছে বিনা পুঁজির এই দেহ ব্যবসা। এসকল পতিতা বিভিন্নভাবে তাদের খদ্দের জোগাড় করে থাকে। ৩০ মিনিট রিক্সায় ঘুরলে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে টাকার পরিমানে তারা বাসা বাড়িতে যেতেও আগ্রহী। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা মানুষকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে মোবাইল, টাকা সহ সাথের সব মূল্যবান জিনিষপত্র। লোক লজ্জার ভয়ে তাই মুখ খুলতে নারাজ তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংসদের সামনে প্রতিদিন ঘটছে এমন অবৈধ ব্যবসা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা বিক্রেতা জানায়, প্রথমে ভালো খদ্দের পেলে (বাসায় যাওয়ার মত চুক্তি) সিএনজিতে করেই যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিএনজি চালক পরিচিত থাকে। তারপর সিএনজিতে ওঠার পর কিছু দূর গেলে ফাঁকা জায়গা পেলেই সব খতম। তার জামা কাপড় ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।

এই ব্যাপারে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আমার যে কয় ঘন্টা ডিউটি, আমি চেষ্টা করি পরিবেশ যেন ভালো থাকে। তবে বাবা-ছেলে একসাথে এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে ছেলের প্রশ্নের কাছে বাবারাও অসহায় থাকে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Street2

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, “সরকার আমার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে তার প্রশংসা করার জন্য, বদনাম করার জন্য না। আমার কাছেও অনেকে বলেছে, স্যার আমরা কি না খেয়ে থাকব? আমি বলেছি, না, আল্লাহ কোথাও বিনা পুঁজির ব্যবসার কথা বলে নি। তোমরা এই পথ ছেড়ে দাও”।

সিএনজি এবং রিক্সা চালকেরাও এই চক্রের সাথে জড়িত বলেও স্বীকার করেন তিনি। এই সকল ভাসমান পতিতারা ক্রমাগত মানুষকে ফাঁদে ফেলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে সঠিক নির্দেশনা পেলে ১ সপ্তাহের মধ্যে সব কিছু বন্ধ করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

রাস্তার বিপরীতে এমপি হোস্টেলের সামনে পুলিশ চেক পোস্টে নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও অপরপাশে অনেকটা উন্মুক্তভাবে চলছে এই বিনা পুঁজির পতিতা ব্যবসা।

যেখানে দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পরিপূর্ণতা পায়, তার পাশেই চলছে এই অবৈধ ব্যবসা। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে সংসদ এলাকা ফিরে পেতে পারে তার সন্মান এমনটাই কাম্য সাধারণ জনগনের।



মন্তব্য চালু নেই