জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষে বাংলাদেশ
আজ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত শান্তিরক্ষীদের স্মরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশে¡র সকল দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদান।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও সততার ফলেই আজকের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা তাদের অনন্য অবদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতিসংঘের ভাবমূর্তিও সমুন্নত করেছে। আমরা গর্বিত যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে বাংলাদেশের অবস্থান আজ শীর্ষে। এটা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের যোগ্যতা ও আন্তরিক কর্মদক্ষতার ফলেই অর্জিত হয়েছে।’
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘ কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিশ্বের অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় এলাকায় শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশ আজ এক আস্থার প্রতীক। পৃথিবীর বিভিন্ন সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশের সদস্যগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শুরু থেকেই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার সাথে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।’
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে আজ বিশেষ ক্রোড়পত্র ও বিশেষ জার্নাল প্রকাশিত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ টক-শো প্রচারিত হবে। শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামী ৩১ মে সকালে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে ‘পিস কিপার্স রান’ এর আয়োজন করা হবে। ওই দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা প্রদান এবং জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রমসমূহ ডিজিটাল ডিসপ্লে প্যানেলের মাধ্যমে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা হবে।
ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহিত প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস প্রথম উদযাপন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী।
শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সততা ও আত্মত্যাগের কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছে। সততা, যোগ্যতা, সহমর্মিতা ও আত্মত্যাগের কারণে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি শান্তিসেনা পঠিয়ে মর্যাদা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাতও এটি। বর্তমানে বিশ্বের ১২২টি দেশের শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ৯৫৯৩ জন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওইসব দেশের ১৭টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন।
বাংলাদেশ গত দুই দশকের অধিক সময়কাল ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছে। এর মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে জাতিসংঘের সর্ববৃহৎ সেনা প্রদানকারী দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয়।
১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। তার পরের বছর, ১৯৮৯ সালে ২৫ জন সেনা ও ৩৪ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক ইউনাইটেড নেশনস ট্রানজিশন্স অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপ ইন নামিবিয়া মিশনে প্রেরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার দীর্ঘমেয়াদি অংশগ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেন। ১৯৯০-৯১ সালে প্রথম আরব উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীতে বাংলাদেশের ২১৯৩ জন সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করে। সেটিই ছিল জাতিসংঘের বাইরে কোনো একক দেশের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কম্বোডিয়া মিশনে প্রথমবারের মতো এক ব্যাটালিয়ন সেনা প্রেরণ করে। বাংলাদেশি সেনাদের পেশাদারি দক্ষতা, আন্তরিকতা ও পক্ষপাতশূন্যতা অল্পদিনের মধ্যেই এ দেশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিতে সক্ষম হয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে আরো বেশি মাত্রায় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়।
জাতিসংঘ মিশনে প্রথম দশক : ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি মিশনে অংশ নেয়। কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, সোমালিয়া, হাইতি, অ্যাঙ্গোলা, সিয়েরা লিওন, কঙ্গো, পূর্ব তিমুর ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় পরিচালিত মিশনগুলো এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৯০-২০০০ স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী প্রথম দশকে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মিশনে অংশ নেয়। এগুলো হলো- রুয়ান্ডা (অক্টোবর ১৯৯৩-ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪), মোজাম্বিক (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩-ডিসেম্বর ১৯৯৪) এবং সোমালিয়া (জুলাই ১৯৯৩-ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)। সোমালিয়া মিশনে বাংলাদেশের ১,৯৬৭ জন সেনা সদস্য অংশ নেন এবং তারা সেখানে কৃতিত্বের সঙ্গে স্থানীয়দের সব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এক ধরনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ মিশনে কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত জেনারেল ডালায়ার বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সেনাদের বিরুদ্ধে তার আদেশ অমান্য করার গুরুতর অভিযোগ আনেন।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সিয়েরা লিওনে অবস্থিত জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেয়। সিয়েরা লিওনের ভয়ানক পরিস্থিতিতে যখন অনেক রাষ্ট্র মিশন পরিত্যাগ করে দায়িত্বে চরম অবহেলার পরিচয় দেয়, বাংলাদেশ তখন সেখানে অল্প সময়ের নোটিশে এক ব্রিগেড সেনা দক্ষতার সঙ্গে মোতায়েন করে। বাংলাদেশি সেনা ব্রিগেড অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে গেরিলা-নিয়ন্ত্রিত জায়গাগুলো পুনরুদ্ধারে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই ভূমিকায় মুগ্ধ সিয়েরা লিওন সরকার বাংলাকে সে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০০৩ সালে এক সরকারি সফরে সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে আসেন এবং তার দেশের শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশিদের ভূমিকা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
শান্তিরক্ষা মিশনে দ্বিতীয় দশক : জাতিসংঘ শান্তি মিশনের দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশের অবদান সেনা ও পুলিশ প্রদানকারী রাষ্ট্র হিসেবে ১০ শতাংশ। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মিশনগুলোতে কর্মরত এবং এর মধ্যে আইভরি কোস্ট ও লাইবেরিয়ায় সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি সেনা কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ সর্বমোট ৪০টি দেশের ৫২টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬,৯২১ জন সেনা সদস্য ও সেনাবিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ বাহিনীর ১,৮৫১ জন সদস্য জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন শান্তি মিশনে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০০ সাল-পরবর্তী সময়ে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরো বেড়েছে।
১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায় পরিচালিত ইউএন ট্রানজিশন অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপে (ইউএনটিএজি) সদস্য প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ মিশনে তার যাত্রা শুরু করে। আজ অবধি সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ অধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘের প্রায় সব মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ আইভরি কোস্ট, সুদান, দক্ষিণ সুদান, পূর্ব তিমুর, ডিআর কঙ্গো, হাইতি ইত্যাদি দেশে পরিচালিত মিশনগুলোতে বিশেষজ্ঞ ও ফর্মড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) উভয় ক্যাটাগরিতে সদস্য প্রেরণ করেছে। বাংলাদেশ এখন অবধি সর্বাধিক বেশি সংখ্যায় নারী পুলিশ সদস্য প্রেরণে সক্ষম হয়েছে এবং তারা দক্ষতার সঙ্গে মিশনগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১০ সালের মে মাসে হাইতিতে বাংলাদেশ থেকে একটি মহিলা ফর্মড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) প্রেরণ করা হয়। যে কোনো মুসলিমপ্রধান জনগোষ্ঠীর দেশ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ এটাই প্রথম এবং এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর আগে শুধু ভারত থেকে ২০০৭ সালে এ রকম একটি মহিলা ফর্মড পুলিশ ইউনিট লাইবেরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা হাইতিতে ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হন। এ ছাড়া এই শান্তিরক্ষীর দলটি হাইতিতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রচারণা, স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো উন্নয়ন এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এর ফলে এই দলটিকে ২০১২ সালে ইউনাইটেড নেশনস মেডেল প্রদান করার মাধ্যমে তাদের অবদানকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়।
২০১১ সালের মে মাসে একটি নেভি ফ্রিগেট ও একটি বহিঃসমুদ্র পেট্রল নৌযানের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম দলটি জাতিসংঘ পরিচালিত ইন্টেরিম ফোর্সেস ইন লেবানন (ইউএনএফআইএল) মিশনে অংশগ্রহণ করে। এভাবে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হয়।
২০০৭ সালে জাতিসংঘ স্ট্যান্ডবাই অ্যারেঞ্জমেন্ট সিস্টেমের (ইউএনএসএএস) আওতায় একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে বর্তমান কাঠামোয় সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রেরণ করা শুরু হয়। মূলত নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত অনুরোধের ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ থেকে সেনা প্রেরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৯০ সালের প্রথমে পাকিস্তান ও ভারতকে পেছনে ফেলে ইউএন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদানকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বাংলাদেশ।
এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬৩টি শান্তি মিশনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এসব মিশনে বাংলাদেশ থেকে ৮২ হাজার ৯৬৫ জন শান্তিকর্মী যোগ দিয়েছে। শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ৯৩ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ নয়টি দেশের শান্তি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৯ হাজার ৩৩৭ সদস্য নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ৬ হাজার ৩৬১ জন, নৌবাহিনীর ৪১৭ জন, বিমানবাহিনীর ৫৪৯ জন ও পুলিশ বাহিনীর ২ হাজার ৫০ জন সদস্য। আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সুদান, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব তিমুর, লেবানন ও হাইতিতে তারা কাজ করছেন। শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবাদে কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ এ মাসে মালিতে শান্তি মিশনে কর্মরত একজন সেনা সদস্য জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন এখন বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বে সর্বোচ্চ শান্তিসেনা প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশবাহিনী আন্তর্জাতিক মান অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যে কারণে বাংলাদেশ বীরের জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। সশস্ত্র বাহিনীর ১৭৬ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ৬০৩ জন নারী কর্মকর্তা তাদের কর্মের মাধ্যমে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মন্তব্য চালু নেই