জঙ্গির হাতে অভিনব অস্ত্র, চেনে না পুলিশ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগীদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানে হামলার অভিযোগে আটক মিনহাজ (২৩) ওরফে সবুজের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের নাম এখনো নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ। এমনকি গোয়েন্দারাও অস্ত্রটি শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কি সেই অত্যাধুনিক অস্ত্র যার নাম অস্ত্র বহনকারী জঙ্গি সবুজও জানেনা। তবে রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছে এই ধরনের আরও অস্ত্র রয়েছে বলে স্বীকার করেছে জঙ্গি সবুজ।

গত ৬ই মার্চ বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গিতে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল জঙ্গি মোস্তফা কামাল ও তার সহযোগীরা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৮ থেকে ২০ জন জঙ্গি এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিলো। এরমধ্যে টঙ্গি কলেজ গেটের কাছে ছিল ৪ থেকে ৫ জন। জঙ্গিরা উত্তরা থেকে টঙ্গি পর্যন্ত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছিল। যেখানে ‍প্রিজন ভ্যানে ককটেল নিক্ষেপ করতে পেরেছিল সেটি ছিল জঙ্গিদের সর্বশেষ অবস্থান। অবশেষে মোস্তফাকে আটক করতে পারলেও অন্য জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলো।

সূত্রে জানা যায়, মোস্তফার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে গত মঙ্গলবার (৭মার্চ) গভীর রাতে নরসিংদীর শেখের চর এলাকা থেকে আটক করা হয় জঙ্গি মোহাম্মদ সবুজকে। তার কাছ থেকে বিদেশি ওই অত্যাধুনিক অস্ত্র ছাড়াও ১৫টি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। আর এই অত্যাধুনিক অস্ত্র শনাক্ত করার জন্যে পুলিশ ও গোয়েন্দারা ব্যর্থ হচ্ছে। তবে অস্ত্রটি শনাক্ত ও কোথা থেকে আনা হয়েছে তা জানার জন্যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গাজীপুরের টঙ্গি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ তালুকদারের সঙ্গে জঙ্গির হাতের অস্ত্র নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, এটি সত্যিই একটি অভিনব অত্যাধুনিক অস্ত্র। চাবির রিংয়ের মতো ছোট। হাতে থাকলে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এটা অস্ত্র।

তিনি বলেন, চাকরির বয়সে এই ধরনের কোনো অস্ত্র আমি কখনও দেখিনি। কেউ প্রকাশ্যে এটি হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করলেও বুঝার উপায় নেই এটি অস্ত্র কি না। অস্ত্রটি মাত্র কয়েক ইঞ্চি। এটার মাঝখানে দুটি স্বর্ণালী কালারের বাটন রয়েছে। এটার একপ্রান্তে চাবির মতো দুটি রিং রয়েছে। এই বক্সের ভিতর ১৬ রাউন্ড গুলি রাখা যায়।

ওসি আরও জানান, এটা চালানোর ক্ষেত্রে জঙ্গি সবুজকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল তার আরেক কথিত বড় ভাই।

সবুজের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি আরো জানান, স্বর্ণালী বাটনগুলোতে চাপ দিলে ক্ষুদ্র অস্ত্রটা একটু লম্বা হয়। তারপর রিং দুটি ধরে টান দিলে ভেতর থেকে গুলি বের হয়। চাবির রিং সম্বলিত অস্ত্র জীবনে কখনও তিনি দেখেননি বলেও জানান।

এই অস্ত্রের বিশেষত্ব কি জানতে চাইলে তিসি বলেন, চাবির রিংয়ে টান দিলে এক সাথে দুটি গুলি বের হয় এটাই অস্ত্রটির বড় বিশেষত্ব।
গাজীপুর জেলার গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আমির হোসেনের কাছে এই অভিনব অস্ত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনিও কিছু জানাতে পারেননি। তিনি জানান, এই অস্ত্রটি আমরা প্রথম দেখলাম। এটা আসলে অস্ত্র কিনা আমাদের কাছেও সন্দেহ ছিল। পরে অ্যানালাইসিস করে দেখতে পেরেছি আসলে এটি একটি অস্ত্র যা আমাদের কাছে একেবারেই নতুন। অস্ত্রটি খোলার পর পাওয়া ১৫ রাউন্ড গুলি ও বডিতে কোনো কিছুই লেখা নাই। এটার ফরেনসিক পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে হয়ত জানা যাবে আসলে এটা কি কোথা থেকে এসেছে। আটক জঙ্গিও বলতে পারছেনা এটা কি ধরনের অস্ত্র। তবে জঙ্গিকে এখনও রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

তবে তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের অস্ত্র জঙ্গিদের কাছে আরো আছে। সেগুলো উদ্ধারের জন্যে এবং জঙ্গিদের আটক করার জন্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এমন অভিনব অস্ত্র জঙ্গিদের কাছে থাকা উদ্বেগের কিনা- জানতে চাইলে তিনি জানান, অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। কারণ অচেনা অজানা অভিনব অস্ত্র তাদের কাছে থাকাটা একটু উৎকণ্ঠার বিষয়। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। জঙ্গিরা গোয়েন্দা পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৬মার্চ) ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীসহ ১৯ আসামিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাজিরার জন্য কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। হাজিরা শেষে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে করে কাশিমপুর কারাগারে নেওয়ার পথে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টঙ্গির কলেজ গেট এলাকায় প্রিজন ভ্যানটিকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোঁড়ে জঙ্গিরা।

এ সময় ককটেল দুটি রাস্তায় বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি এবং প্রিজন ভ্যানেও বোমা লাগেনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি গ্রেনেড, দুইটি পেট্রল বোমা, পাঁচটি হাত বোমা ও দুইটি চাপাতিসহ মোস্তফা কামালকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন নরসিংদী থেকে সবুজ নামে একজনকে অভিনব এই অস্ত্রটিসহ আটক করা হয়। আর এ অস্ত্রটি কি ধরনের তা পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখনও শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে।-পরিবর্তন



মন্তব্য চালু নেই