জঙ্গির সন্তান নিয়ে কি বাঁচা যায়! এখন কী করবেন আয়শা?
আয়শা উমরের স্বামীকে হত্যা করেছে বোকো হারাম। তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অসংখ্যবার শারীরিক নির্যাতন করেছে তারা। অবশেষে তিনি ঝুঁকি নিয়েই পালিয়ে এসেছেন জঙ্গি আস্তানা থেকে। এখন নতুন দুশ্চিন্তা– শিশু সন্তানটিকে বাঁচাবেন কী করে!
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে নাইজেরিয়ার গোয়োজো এলাকায় হামলা চালায় বোকো হারাম। আয়শার বাড়িতে ঢুকে চোখের সামনেই গুলি করে মারে তাঁর স্বামীকে। সেই থেকে প্রায় এক বছর সামবিসার গহিন জঙ্গলে বোকো হারামের শিবিরে বন্দি ছিলেন আয়শা উমর। বন্দি থাকা অবস্থায় বোকো হারাম জঙ্গিরা প্রায়ই তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করত। অমানবিক নির্যাতন এবং অপমানের জীবন নিয়েও আয়শা তখন বাঁচতে চেয়েছেন, বাড়িতে ফেলে আসা তিন সন্তানকে ফিরে পাবার আশায় বুক বেঁধেছেন প্রতিদিন।
এরই মধ্যে বন্দি শিবিরেই চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেন আয়শা। কোনো এক জঙ্গিরই সন্তান। তাই জঙ্গিরাই বোকো হারামের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইউসুফের নামানুসারে নবাগতের নাম রাখে ইউসুফ।
গত বছর ইউসুফকে কোলে নিয়েই পালিয়ে আসেন আয়শা। জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্ত হয়েই ছুটে যান নিজের বাড়িতে। জানতে পারেন তাঁর তিন সন্তান এখনো জীবিত, এক প্রতিবেশী বেশ আদারেই লালন-পালন করছে তাদের৷ শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন চার সন্তানকে নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করবেন। কিন্তু অল্প কিছুদিনেই বুঝতে পারলেন, তা আর সম্ভব নয়।
আয়শা উমর এখন নিজের চিরচেনা এলাকাতেই সন্তান হারানোর হুমকির সম্মুখীন। স্থানীয় একজনের তিন শিশু সন্তানকে হত্যা করেছিল বোকো হারাম। সন্তান হারানো সেই পিতা আয়শাকে জানিয়েছেন, বোকো হারামের সন্তান ইউসুফকে তিনি এ এলাকায় সহ্য করতে পারবেন না। আয়শাকে তিনি বলেছেন, ‘‘তুমি ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও। নইলে একদিন আমি এসে ওকে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেবো।”
আয়শার তিন সন্তানও ইউসুফকে ভাই হিসেবে মানতে নারাজ। তারাও বলেছে, ‘‘মা, তুমি ইউসুফকে অন্য কোথাও রেখে আমাদের কাছে ফিরে এসো।”
কিন্তু চাইলেই তো সন্তানকে কোথাও রেখে আসা যায়না। তাছাড়া কে রাখবে ইউসুফকে? সবাই এখন তাকেও সন্দেহের চোখে দেখে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক জায়গায় বোকো হারামের হয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলায় মেয়েরাও অংশ নিয়েছে। তাই সবাই মনে করছে, আয়শাও হয়ত বোকো হারামের সদস্য।
নিজের এলাকায় শিশু সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা না দেখে বাধ্য হয়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন আয়শা উমর। আদামাওয়া রাজ্যের মাদাগালিতে পৌঁছে মনে হয়েছিল কোলের শিশুটিকে নিয়ে কোনোরকমে হয়ত জীবনটা পার করা যাবে৷ কিন্তু সেখানেও একই পরিস্থিতি। সবাই সন্দেহ এবং ঘৃণার চোখেই দেখছে আয়শা এবং তাঁর সন্তান ইউসুফকে। বাধ্য হয়ে বোকো হারাম জঙ্গির সন্তান ইউসুফকে ছাড়া জীবনযাপন করার কথাই ভাবছেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আয়শা বলছিলেন, ‘‘কেউ যদি এই সন্তানটাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেত আমি সত্যিই খুশি হতাম। -ডিডাব্লিউ
মন্তব্য চালু নেই