"সন্দেহভাজন বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে। " স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ছে

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত সন্দেহে কিছু সংগঠনের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ বিষয়ক সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটির বৈঠক থেকে এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।এই বৈঠক থেকে আরও বলা হয়েছে, শুধু অভিযান চালিয়ে বা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে জঙ্গি তৎপরতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।সে জন্য এখন জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ ভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, জঙ্গিরা এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে সংঘঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ বিষয়ক সরকারি কমিটিতে স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানরা রয়েছেন। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের জুন মাসে। এখন নয় মাস পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে এই কমিটির বৈঠক হল।সেখানে বিভিন্ন নামের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরেছে বলে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন,জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে, এমন সন্দেহভাজন বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে।তিনি বলছিলেন, “জঙ্গি সংগঠনের নাম অনেকগুলি ছিল। গোয়েন্দারা তাদের নজর রাখছে। সেই গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।”

যে সংগঠনগুলো তালিকায় রয়েছে, সেগুলোর নাম প্রকাশ করেননি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন,জামায়াতুল মুজাহেদিন বা জেএমবি,হরকাতুল জেহাদ এবং হিযবুত তাহরিরসহ যে পাঁচটি সংগঠন নিষিদ্ধ রয়েছে। সেগুলোও নতুন করে সংঘঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

“জঙ্গিরা এখন নিজেদের সংঘঠিত করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি তৎপর।”

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন

এই সংগঠনগুলো অনেক ক্ষেত্রে নাম পাল্টিয়ে ভিন্ন নামে তৎপরতা চালাচ্ছে। হিযবুত তাওহীদসহ এমন কয়েকটি সংগঠনের অস্তিত্ব পুলিশ পেয়েছে। জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে কাজ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন । তাঁর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, জঙ্গিরা এখন নিজেদের সংঘঠিত করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি তৎপর। তিনি বলছিলেন, “এখানে জঙ্গি তৎপরতা স্তিমিত থাকলেও যে কোন রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কোন একটা পরিস্থিতি তৈরির সামর্থ্য এখনও তাদের রয়েছে।এখন জঙ্গিরা সংগঠনের নামকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা নিজেদের সংঘঠিত করার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল বেছে নিয়ে কাজ করছে।”

গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের তিনজনকে প্রিজন ভ্যানে নেওয়ার সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গিদের আক্রমণে একজন পুলিশ নিহত হয়েছিল। সেই আক্রমণে জঙ্গিরা তিনজন আসামীকেই ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের একজনকে আবার আটক করা গেলেও বাকি দু’জনকে এখনও ধরা যায়নি।যদিও সরকার জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করে। কিন্তু শীর্ষ জঙ্গিদের দিনের বেলায় ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে নতুন উদ্বেগের বিষয় বলেই সরকারের অনেকে বলেছেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযানের পাশাপাশি এখন জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা বা সচেতনতামূলক কর্মসূচির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, “বৈঠকে সকলে একমত হয়েছেন যে জঙ্গি দমন জোরালো পদক্ষেপ না নিলে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। সে জন্য কোমল মতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি নেওয়া হবে। মসজিদেও জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে বক্তব্য তূলে ধরা হবে। আরও চিন্তা করছি, আমরা শর্ট ফিল্ম করবো এবং গণমাধ্যমেরও সহায়তা নেবো।” যদিও মন্ত্রী শিগগিরই এসব কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বিভিন্ন সময় এ ধরণের নানান কর্মসূচি নেওয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে তেমন গুরুত্ব থাকে না।



মন্তব্য চালু নেই