ছবি তুলতে গিয়ে সৌধ প্রাঙ্গণে অবাধে গণকবর পদদলিত
টিপু সুলতান (রবিন)-সাভার: লাখো বীরদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই ৪৫তম স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছে। কত মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে বহু কাক্সিখত স্বাধীন মাতৃভূমি পেয়েছি। আর তাই আজ এত সহজে স্বাধীনতার এই সম্পদ আমরা ভোগ করতে পারছি। কিন্তু স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করতে গিয়ে যে কখন সেই সব জাতির বীর সন্তানদের পদদলিত করে নিজেদের রোমাঞ্চকর ছবি তুলছি তা ভুলে গেছি। কখন যে নিছক ছবি তুলতে গিয়ে স্বাধীনতার স্মৃতি ফলকের চূড়ায় উঠে শহীদ বেদীকে অবমাননা করছি তারও খেয়াল নেই।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঘুরতে আসা বেশীর ভাগ দর্শনার্থীইে বুঝে না বুঝে এ ধরনের লজ্জাকর কাজ করতে দেখা গেছে। যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সাধারণ জনতার কেউই বাদ যায়নি। তবে শুধুমাত্র সৌধ কর্তৃপক্ষের বেখেয়ালীপনা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে তারা কবরের উপর উঠে ছবি তুলেছেন বলে মন্তব্য দর্শনার্থীদের।
স্মৃতিসৌধ ফলকের সামনে থাকা দশটি গণকবরের একটির উপর বসে এভাবেই দেশের সুনামধন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।সাংবাদিকদের উত্তরে তাদের মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিস্যাস্ট ডিরেক্টর মো. জাবেদ জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। তবে এখানে যে গণকবর আছে তা তারা জানতেন না। তাছাড়া এসংক্রান্ত কোন জনসচেতনামূলক সাইনবোর্ডও লাগানো নেই। তাই তাদের মত অনেকেই না বুঝে নির্বিচারে গণকবর গুলো পদদলিত করছেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই দেখা যায় দেশের একটি চব্বিশ ঘন্টা সংবাদ প্রচারকারী নতুন চ্যানেলের সাংবাদিক শিশুদের গণকবরের উপর উঠিয়ে বক্তব্য নিচ্ছেন। পাশের গণকবর গুলোতেও দেখা দেখি সাধারণ জনতারা কবরের উপরে উঠে স্থিরচিত্র তুলতে মগ্ন।
তবে এভাবে জাতির বীর সন্তানদের যেখানে শায়িত করা হয়েছে সেই সব গণকবর গুলো পদদলিত করার ব্যাপারে স্মৃতিসৌধের নিরাপত্তাকর্মীদেরও বেদীর আশে পাশে কোথাও দেখা যায়নি।
এছাড়া সৌধ চূড়ার কাছে যেতেই চোখে পড়লো সু-উচ্চ ¯স্বাধীনতা ফলকের চূড়ার প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায় উঠে দশ-বারো জন অবাধে তুলে যাচ্ছেন ছবি। তাদের দেখে আরও অনেককেই দেখা গেছে সৌধের অন্যান্য চূড়া গুলোতে উঠে জুতা পায়ে ছবি ছুলতে।
কিন্তু জাতির বীর সন্তানদের এভাবে পদদলিত করার চিত্র প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘটলেও তা চোখে পড়েনি সৌধ কর্তৃপক্ষের। মূলত অনেক ঘোরাঘুরি করেও সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের কাউকেই দেখা যায়নি।
এব্যাপারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, স্মৃতিসৌধে আগত বেশীরভাগ দর্শনার্থী অল্পশিক্ষিত গার্মেন্ট শ্রমিক। আর তাছাড়া সৌধে বিশেষ দিন গুলোতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তাই এত মানুষকে এব্যাপারে সচেতন করা তাদের অল্প সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মীর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
মন্তব্য চালু নেই