চীনে কেবল নারীদের জন্য মসজিদ
সাধারণত ইসলামী রীতি অনুসারে নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু কাল পরিক্রমায় সেই চিন্তাধারায়ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কিছুদিন আগে দক্ষিণ ক্যালিফোর্ণিয়ায় শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। দুইজন নারীর উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল ওই মসজিদটি। এবার ক্যালিফোর্ণিয়া ছাড়িয়ে নারীদের জন্য নির্মিত আরও একটি মসজিদের খবর পাওয়া গেল চীনে। চীনে মোট জনগোষ্ঠির প্রায় এক দশমিক সাত শতাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বসবাসের পাশাপাশি রয়েছে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর মানুষ।
প্রত্যেক ধর্মালম্বীদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা উপসানালয়। তবে গির্জা ও মন্দিরে মেয়েরা প্রবেশ করতে পারলেও মসজিদের প্রবেশ থেকে মুসলিম নারীরা কেন পিছিয়ে থাকবে এই কথা মাথায় রেখে মুসলিম নারীদের জন্য বেশ কয়েকবছর আগেই তৈরি করা হয়েছিল এই মসজিদটি। স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করেন নারীদের জন্য এই মসজিদ নির্মানের ফলে নারীদের নিয়ে ইসলামিক চিন্তাধারায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে পেরেছে।
চীনের হেনান প্রদেশের কাইফেং শহর চীনা সভ্যতার একটি প্রাচীন শহর বলে ধারণা করা হয়। বলা হয়ে থাকে, এক হাজার বছর আগে এটিই ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম শহর। উনিশ শতাব্দীর দিকে এই শহরটি ছিল বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের মিলনস্থল। এই শহরটিতে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য একটি প্যাগোডা যেখানে সারা বছর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভিড় লেগেই থাকে। রয়েছে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের জন্য মসজিদ ও গির্জা। সাত শতাব্দীর দিকে চীনেই প্রাচীন মুসলিম সম্প্রদায়ের গোড়াপত্তন ঘটে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া পরবর্তীতে চীনে ইহুদি সম্প্রদায়েরও বিস্তার ঘটে এবং বলা হয়ে থাকে সম্ভবত তারা এসেছিল পারস্য ও ইয়েমেন থেকে।
যদিও এটা খুব অবাক হবার বিষয় যে, কেবল মাত্র মুসলিম নারীদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল অনেক বছর আগেই এবং সেই মসজিদের ইমামও ছিলেন একজন নারী। আর মসজিদটি ঠিক এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে যেখান থেকে দুকদম হাঁটলেই পুরুষদের মসজিদ। নারী পুরুষের সমান অধিকারের জন্যই মূলত এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। মসজিদ দুটির দুপাশে রয়েছে ছোট একটি হৃদ। যা মসজিদের চারপাশে একটি মনোরম ও শান্ত পরিবেশের উপলদ্ধি ঘটায়। পুরুষদের মসজিদের ইমামতি করেন জিও জিংফেং, যিনি তার বাবার কাছ থেকে ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন।
নারীদের জন্য তৈরি মসজিদটির নাম ওয়াংজিয়া অ্যালি মসজিদ। ১৮২০ সালের দিকে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় এবং এরপর থেকেই ওই শহরের মুসলিম নারীরা এখানেই তাদের নামায আদায় করেন। মসজিদটি বেশ পরিপাটি করে গোছানো। মসজিদের মেঝে কার্পেট দিয়ে ঢাকা এবং রয়েছে বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা। তবে মসজিদটিতে একসঙ্গে ৫০ জনের বেশি দাড়িয়ে নামায আদায় করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। মসজিদটিতে নামাযের পাশাপাশি নারীদের কুরআন শিক্ষাও দেয়া হয়।
স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করেন নারীদের মসজিদের গিয়ে নামায আদায় নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। ইসলামে বলা হয়েছে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার। তাহলে মসজিদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেন থাকবে বলে মনে করেন চীনের মুসলিম নারীরা। তারা বলেন, অনেক নারী একসঙ্গে একই কাতারে দাড়িয়ে নামায আদায় করছে ফলে নিয়মিত নামায আদায়ে তারা অনেক উৎসাহী হচ্ছে। তারা বলেন, আগে কাইফেং শহরে এই মসজিদটি থাকলেও কোন নারী এখানে নামায পড়তে আসতো না। তবে এখন এখানে নারীরা বেশ আগ্রহের সঙ্গেই নামায আদায় আসে। আগে যেখানে এই শহরটিকে কেউ চিনতোই না বললেই চলে, এখন এই মসজিদটি স্থাপনের পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদেশি পর্যটকরা পর্যন্ত মসজিদটি দেখার জন্য ভিড় করে।
মন্তব্য চালু নেই