চিরকুমার মোদির স্ত্রী ইস্যুতে কংগ্রেসের নয়া রাজনীতি

বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি লোকসভা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে গুমর ফাঁস করে দিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারলেন। এখন হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস। ২০০২ থেকে ১০১২ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে তিনি হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। এখন তার শাস্তি প্রাপ্য। মোদিকে যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস। শুক্রবার আইনমন্ত্রী কপিল সিবালের নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে এ অভিযোগ দায়ের করেছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার গুজরাট রাজ্যের ভাদোদারা আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন নরেন্দ্র মোদি। তাতে তিনি স্ত্রীর নামের স্থানে লেখেন ‘যশোদাবেন’। অথচ আগের সব নির্বাচনে সে স্থানটি খালিই রাখতেন। সবাই জানতো মোদি চিরকুমার। জানা যায়, যশোদাবেন বর্তমানে একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। কৈশোরে মোদির সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং খুব কম সময়ই তারা সংসার করেছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সিবাল বলেন, ‘২০০২, ২০০৭ এবং ২০১২ সালের নির্বাচনে মোদি তার বৈবাহিক অবস্থা গোপন করেছেন। এ কারণে আমরা নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি।’
বিজেপি বলছে, এটা মোদির ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু সিবাল সে যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই ভোটাররা জানতে চান। একজন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে অবশ্যই স্পষ্টবাদী এবং সৎ হতে হবে।’
এদিকে কংগ্রেসও মোদির বিষয় নির্বাচনী প্রচারণার কৌশলে যুক্ত করেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারণায় মূলত চালকের আসনে বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ আর কংগ্রেসের ‘দুর্নীতি’। কিন্তু ‘চিরকুমার’ মোদি হঠাৎ ‘বিবাহিত’ মোদিতে আবির্ভুত হওয়ায় নতুন ইস্যু পেয়ে গেল কংগ্রেস।
কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী জম্মু-কাশ্মীরে এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছেন, ‘আমরা জানি না তিনি (মোদি) কতোগুলো নির্বাচনে লড়েছেন, কিন্তু এ-ই প্রথম তিনি জানালেন যে, তিনি বিবাহিত। দিল্লিতে তারা (বিজেপি) মেয়েদের সম্মান দেখানোর কথা বলে…অথচ হলফনামায় তিনি কখনোই তার স্ত্রীর নামটি লেখেননি।’
মোদির এই বিলম্বিত স্বীকারুক্তির পরপরই তার বড় ভাই সোমাভাই দামোদর মোদি এক বিবৃতিতে জানান, যশোদাবেনের সঙ্গে মোদির বিয়ে হয় চার দশক আগে। এটা শুধুই একটা আনুষ্ঠানিকতা ছিল। পরে দেশের সেবায় মোদি সেই সংসার জীবন ত্যাগ করেন।
যশোদাবেনের বয়স এখন ৬২ বছর। পশ্চিম গুজরাটের একটি গ্রামে তিনি ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন। এখন একটি পুণ্যার্থীদের সঙ্গে কোথাও আছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বিজেপি বলছে, মোদির এই ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস যতোই লম্ফঝম্ফ করুক কোনো লাভ হবে না। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে। এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে কংগ্রেসের জন্যই বুমেরাং হবে। তাতে মোদির প্রতিই জনসমর্থন বাড়বে। তবে যতোই বলুক, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপি যখন মোদিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তখন ইস্যুটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। আর ভারতের রাজনীতিতে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠ গরম করার কৌশল নতুন নয়। আগের নির্বাচনগুলোতে বিজেপি সোনিয়া গান্ধীর ইতালির নাগরিকত্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছে। রাহুলের অনভিজ্ঞতা নিয়েও কম কথা হয়নি। এখন বিজেপির কপালে এমনিতেই সাম্প্রদায়িকতা তিলক রয়েছে তার সঙ্গে যুক্ত হলো মোদির ‘স্ত্রী’ ইস্যু।



মন্তব্য চালু নেই