গাজায় একদিনে ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় শনিবার রাত থেকে ভয়াবহতম হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। সেখানে রোববার তাদের একদিনের হামলায় কমপক্ষে ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় নিহত হয়েছে ১৩ ইসরায়েলি সেনা।

রোববার ইসরায়েলি হামলায় যে ৮৭ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৬০ জনই গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শেজাইয়া জেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে গাজায় গত ১৩ দিনের হামলায় ৪২৫ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হলো।

বিবিসি শেজাইয়া পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করেছে। রোববার ইসরায়েলি সেনারা ঘনবসতিপূর্ণ শেজাইয়া এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্বিচারে গোলা ও বোমা বর্ষণ করে। বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এখানেই। বহু মানুষ এখনও বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে আছে। রাস্তায় পড়ে আছে বহু মৃতদেহ। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মুখপাত্র সামি আবু ঝুহরি অভিযোগ করছেন, ইসরায়েল সেখানে রীতিমত গণহত্যা চালিয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতা পল এডামস শনিবার রাতের এই তীব্র হামলার পর রোববার শেজাইয়া এলাকায় পৌঁছান। তিনি জানাচ্ছেন, শত শত ফিলিস্তিনি সব কিছু ফেলে সেখান থেকে পালাচ্ছে। নিজেদের শিশু সন্তান ছাড়া এদের আর কিছু তাদের বহন করতে দেখেননি তিনি। পল এডামস বলছিলেন, সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখলেই ফিলিস্তিনিরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। একজন বৃদ্ধা মহিলা আকাশের দিকে হাত তুলে বলছিলেন, ‘আল্লাহ কীভাবে তাদের বিরুদ্ধে এরকম একটা হামলা ঘটতে দিতে পারলেন।’

জাতিসংঘের হিসাব মতে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর ৮৩ হাজার ৬৯৫ ফিলিস্তিনি ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ শেজাইয়ায় ইসরায়েলি হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেছেন, ইসরায়েলিরা সেখানে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ঢুকতে দিচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রেডক্রস খুবই চেষ্টা করেছিল যাতে করে ওই এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেয়া হয়। কিন্তু ওই এলাকা দখল করে রাখা ইসরায়েলিরা সেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেয়নি। আন্তর্জাতিক রেডক্রস এখনও তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে একটা হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে, একটা যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।’

এদিকে হামস রোববার সন্ধ্যায় এক ইসরায়েলি সেনাকে আটক করার দাবি করেছে। তবে তেলআবিব তাদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন প্রেসির বলেন, ‘কোনো ইসরায়েলি সেনা অপহৃত হয়নি। এগুলো অসত্য এবং গুজব।’

এদিকে শনিবার রাত থেকে হামাসের হামলায় ১৩ ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে একদিনে এতগুলো সেনা নিহত হওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা। গত কয়েকদিনের লড়াইয়ে এ নিয়ে মোট ১৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত হল। বিবিসি জানিয়েছে, একদিনে এতগুলো সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলি জনগণ শোকাহত হয়ে পড়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার শপথ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি হলেও আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’ তিনি ১৩ সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রোববার সন্ধ্যায় এক জরুরি অধিবেশনে মিলিত হয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ স্থায়ী সদস্য। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ বন্ধের একটি আঞ্চলিক তৎপরতায় সমর্থন জানাতে সোমবার মিশর সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।



মন্তব্য চালু নেই