গাজায় বাতি নিভিয়ে ইসরাইলের গণহত্যা, রাসায়নিক বোমা বর্ষণ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালিয়ে রাতভর গণহত্যা চালাচ্ছে হানাদার ইসরাইলি বাহিনী। তারা গাজাবাসীর উপর রাসায়নিক বোমা বর্ষণ করছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গণহত্যার এই অভিযানে উত্তর গাজা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলের সারি সারি ট্যাংক। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পুরো গাজায় ভারি বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। সীমান্তে অবস্থান করছে পদাতিক বাহিনী ও যুদ্ধ জাহাজ।
দক্ষিণ গাজা সীমান্তে ইসরাইলের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকও স্বশস্ত্র অবস্থান নিয়ে গাজায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে।
দশ দিন ধরে চলা গাজা যুদ্ধে গত নয় দিনে এ পর্যন্ত ২৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতি বিকাল ৩ টায় শেষ হয়। এরপর গাজা থেকে সুরঙ্গ পথে অস্ত্রধারীরা ইসরাইলে প্রবেশের চেষ্টা করেছে বলে ৮-১৩ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী।
রাত ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বাত্মক স্থল অভিযানের নির্দেশ দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মশি ইয়ালুন।
এই নির্দেশনার পর গাজায় স্থল অভিযানে ইতোমধ্যে মোতায়েন করা ৪০ হাজার সেনার সাথে আরো ১৮ হাজার সেনা মোতায়েন করতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানালে তারও অনুমোদন দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
স্থল অভিযানের মাধ্যমে হানাদার বাহিনীকে ইসরাইলের সাথে গাজার সুরঙ্গপথগুলো ও গাজায় অবস্থিত হামাস নেতাদের বাড়িঘর গুড়িয়ে দিতে বলেছেন নেতানিয়াহু।
ইসরাইলের দৈনিক হারেজ ও জিউশ টেলিগ্রাফিক এজেন্সি, কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা, ইরান ভিত্তিক রেডিও তেহরান ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাই ফেসবুক ও অবলম্বনে গাজায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশের সময়ের সাথে তিন ঘন্টা যোগ করে ইসরাইলের ঠিক সময় নির্ধারণ করতে হয়।
রাত: ৩:০০: খানইউনিস শহরে ইসরাইলের রাসায়নিক বোমা আক্রান্ত ফিলিস্তিনীদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন রেড ক্রস ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলের সদ্যরা। আক্রান্তদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে দুজনকে উদ্ধার করে নাসের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাত: ২: ৩০: ইসরাইলের রাসায়নিক অস্ত্রে আক্রান্তদের হাসপাতালে নিতে গাজার রেড ক্রস অফিসে ফোন করে সব ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল জেনেভাতে রেড ক্রস সদর দপ্তরকে এ খবর জানাতে বলেছে।
রাত: ২: ১০: গাজার পশ্চিমাঞ্চলীয় খানইউনিস শহরের খুজাহার পূবে আল নাজ্জার এলাকায় ও গাজা বন্দরের কাছে রাফাহার পূবে আল নাতাহা শহরে বিষাক্ত রাসায়নিক বোমা বর্ষণ করেছে ইসরাইলি বিমান বাহিনী। সবুজ এই গ্যাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বয়স্ক ও শিশুরা। তারা প্রচণ্ড বমি ও খিঁচুনির শিকার হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।
রাত: ১: ৫৩: ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমাণ্ড ধারণা করছে গাজায় স্থল অভিযানকালে হামাস এন্টি র্যাংক রকেট, গ্রেডেন ও স্নাইপার নিয়ে শত্রুপক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। এই জন্য হামাস প্রস্তুত বলেও অনুমান করছে তারা।
রাত ১: ৩৩: মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলের গাজা অভিযানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কায়রো প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বলেছে ইসরাইল ও হামাসকে।
রাত ১: ২৬: দক্ষিণ ইসরাইলের অফাকিমের খোলা জায়গায় হামাসের ছোড়া তিনটি রকেট বিস্ফোরিত হয়েছে। অবশ্য চারটি রকেজ অকেজো করে দিয়েছে ইসরাইলি আয়রন ডোম প্রযুক্তি।
রাত: ১২: ৫৪: গাজার উপত্যকার ১২টি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ও গুলি বর্ষণ করেছে ইসরাইলি বিমান বাহিনী।
রাত: ১২: ২৯: জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গাজায় স্থল অভিযানের ঘটনায় শুধু দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধে ইসরাইলকে আরো বেশি কিছু করে দেখাতে হবে। মুন এই বক্তব্যের মাধ্যমে হামাসের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রতিশোধ পরায়ণতা চরিতার্থ করতে উৎসাহ দিলেন।
ফরাশী পররাষ্ট্র মন্ত্রী লঁরেন্ট ফ্যাবিউস গাজায় স্থল অভিযানের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ইসরাইলকে ‘চূড়ান্ত সংযম’ প্রদর্শন করতে বলেছেন।
রাত ১১: ৫৬: গাজায় ‘আকস্মিক’ স্থল অভিযানের ব্যাপারে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি।
মন্তব্য চালু নেই