খুনিয়া দিঘি : নাম শুনলেই শরীর শিউরে ওঠে

আসলেই এ দিঘির নামটা যেমন ভয়ের তেমনি করুণ। ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার দক্ষিণে খুব কাছে খুনিয়া দিঘি। এ দিঘির আকার-আয়তন তেমন বড় নয়। কিন্তু ইতিহাস আর গুরুত্বের দিক থেকে এ দিঘি অনেক বড়। দিঘির পাড় দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় মনে পড়ে যায় হানাদারদের সেই লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের কথা। শিউরে উঠে শরীরের লোম।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাধীনতাকামী নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে ঐতিহাসিক ঐ খুনিয়া দিঘির পাড়ে একটি শিমুল গাছের সঙ্গে হাতের তালুতে লোহার পেরেক গেঁথে ঝুলিয়ে রেখে রাইফেলের বাঁট ও ব্লেড দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালাতো। দিঘির পাড়ে লাইন করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ব্রাশফায়ার করে মারতো পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা। মেরে লাশগুলো ফেলে দিতো দিঘির পানিতে। মানুষের তাজা রক্তে লালে লাল হয়ে উঠতো খুনিয়া দিঘির পানি।

হাহাকার ও আর্তনাদে ভরে উঠতো এ এলাকার আকাশ-বাতাস। কত মানুষকে মারা হয়েছিল খুনিয়া দিঘিতে এর কোনো হিসাব নেই। এক তথ্য মতে প্রায় ২ হাজারের বেশি মানুষকে মারা হয়েছিল এই দিঘিতে। আজও খুনিয়া দিঘি থেকে উঠে আসে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি। পাকহানাদাররা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এলাকার যুবতী ও সুন্দরী নারীদের ধরে এনে ক্যাম্পে আটকে রেখে চালাতো পাশবিক নির্যাতন।

ঐতিহাসিক দিক থেকে নয়, খুনিয়া দিঘি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত স্মারক চিহ্ন। দুঃখের বিষয় এ দিঘিটি আজও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। স্থানীয় উদ্যোগে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু খুনিয়া দিঘির জন্য এতটুকু সম্মান বা মূল্য তেমন কিছুই নয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে শহীদদের স্মরণে এক বড় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা সহ দিঘিটি রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

৬ একর আয়তনের খুনিয়া দিঘি প্রায় দুইশ’ বছর আগে স্থানীয় কোনও জমিদার খনন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে এই এলাকার ব্যবসায়ীরা দিঘির পাশ দিয়ে ব্যবসা করতে রায়গঞ্জে যেতেন। দিঘি এলাকাটি নির্জন জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। এখানে এক ব্যবসায়ীকে খুন করে দিঘির পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। তখন থেকেই এর নাম হয়ে যায় খুনিয়া দিঘি। ধারণা করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রায় কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করে এই দিঘিতে ফেলে রাখে।



মন্তব্য চালু নেই