ডিবির দাবি ‘বন্দুকযুদ্ধ’

খিলগাঁওয়ে গুলিতে ছাত্রদল নেতা নিহত

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের জোড়াপুকুর খেলার মাঠের পাশে ‘অস্ত্রধারীদের’ গুলিতে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক মো. আব্দুল সত্তার পাটোয়ারী  জানান, জনি খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

অন্যদিকে খিলগাঁও থানা পুলিশের দাবি, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ নুরুজ্জামান জনিকে ‘আহত’ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার জনিকে মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলাউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর পেয়ে ওই যুবককে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে রাত পৌনে ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের বলেন, সাদা পোশাকের বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী গভীর রাতে এখানে এসে গোলাগুলি করে। এ সময় একজনকে গুলি করে পরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে দেখি।

‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা শোনার পর ঢাকা মেডিকেলে বাড়তে থাকে গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়। মর্গে রাখা লাশের বুকে ও ডান হাতে বেশ কয়েকটি গুলির ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত একজন ডাক্তার নাম না প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নিহতের শরীরে আমরা ১৫টি গুলির চিহ্ন পেয়েছি। বুকে ১১টি আর ডানহাতে ৪টি।’

ঘটনার সত্যতা জানতে আবার খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলাউদ্দিনকে ফোন করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় এসআই আলাউদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের খিলগাঁও থানায় সরাসরি যোগাযোগ করতে বলেন। ভোর সাড়ে চারটার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা খিলগাঁও থানায় গেলে সেখানে এসআই আলাউদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে ডিউটি অফিসার এসআই আরিফ হোসেনের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। শুধু শুনেছি একজন আহত হয়েছে, কে বা কারা তাকে গুলি করেছে আমার জানা নেই। পরে সে মারা গেছে কিনা তাও জানি না। আমি এর বেশী কিছু বলতে পারব না।’

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তার কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে যান। সেখানে ব্রিফ করা হবে। মিডিয়া সেন্টার কেন করা হয়েছে? আমার কাছে কেন তথ্য চান? আমি ডিউটি অফিসার, আমার কাজ অফিসে বসে থাকা। অফিসের বাইরে কী ঘটেছে তা আমি কীভাবে জানব। সেটা বলতে পারবে আমাদের পেট্রোল টিম। পেট্রোল টিম এখনো আমাকে কোনো তথ্য দেয়নি।’

পরে গণমাধ্যমকর্মীরা জোড়াপুকুরপাড় খেলার মাঠের সামনে গেলে রবি (ছদ্মনাম) নামের এক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয়। রবি বলেন, ‘আমি ময়লার মধ্য থেকে কাগজ টোকাই। রাত ৩টার দিকে একটা সাদা প্রাইভেটকার থেকে তিনজন লোক নেমে আসে। এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ভাইয়া তুমি এখানে কী করো?’ আমি বলি কাগজ টোকাচ্ছি। তখন তারা বলে, ‘তুমি এখান থেকে যাও। দু-এক ঘণ্টা অন্য জায়গায় যাও।’ তখন আমি তাদের জিজ্ঞেস করি- কেন স্যার, আমি কেন যাব। তখন তারা বলে, ‘এখানে এখন সমস্যা হবে। তুমি চলে যাও। এর পর আমি দেখি পশ্চিম দিকের গলি থেকে আরও তিন-চারজন বের হচ্ছে। এর পর একটা কালো রংয়ের পাজেরো গাড়ি এসে থামে। কিছুক্ষণের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। তখন আমি ভয়ে দূরে গিয়ে দেখতে থাকি। অনেকক্ষণ গোলাগুলি হয়। একজনকে গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখি। তার গায়ে সাদা শার্ট ছিল। এর কিছুক্ষণ পর সবাই চলে যায়। পরে পুলিশ, র‌্যাব, ডিবির বেশ কয়েকটি গাড়ি আসে। কাউকে কাছে যেতে দিচ্ছিল না। এর কিছুক্ষণ পর আমি এখানে আসি।’

রবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রথমে গণমাধ্যমকর্মীরা রাস্তার উপর তিনটি গুলির খোসা পড়ে থাকতে দেখেন। অন্যান্য জায়গায় কোনো ধরনের আলামত আছে কিনা, তা খুঁজতে থাকেন তারা। এর পর দেখা যায়, জোড়াপুকুর খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশের গেটের সামনে রক্তের চিহ্ন। সেখানে রক্তের মধ্যে একটি গুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, গুলিটি শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেছে। ওই জায়গায় শার্টের একটি বোতাম পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই সঙ্গে কংক্রিটের রাস্তার বেশ কয়েকটি জায়গায় গুলির চিহ্নও দেখা যায়।’

পরে ঘটনাস্থলের তোলা ছবি ও ভিডিও ‍ফুটেজ নিয়ে আবারও খিলগাঁও থানার ডিউটি অফিসার আরিফ হোসেনকে দেখাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ সব আমি দেখে কী করব। আপনারা ছবি তুলেছেন, এখন আপনারা তা প্রকাশ করুন। আমিতো আর দেখিনি কারা গুলি করেছে।’

জনির বাবার ভাষ্য : জনির বাবা ইয়াকুব আলী জানান, গত শুক্রবার তার বড় ছেলে নুরুজ্জামান জনিকে না পেয়ে ছোট ছেলে মনিরুজ্জামান হিরাকে বাসা ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। হিরাকে দেখতে জনি সোমবার দুপুর ১টায় জেলগেটে যায়। এ সময় সাদা পোশাকধারীরা জনিকে সাদা প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়।

গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য : ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, জনি ছাত্রদলের নেতা বলে জানা গেছে। রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের ওপর সর্বশেষ বোমা হামলার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।

ডিবি (দক্ষিণ) সূত্র জানায়, সোমবার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে ডিবি জনিকে আটক করে। এর পর রাত আড়াইটার দিকে তাকে নিয়ে খিলগাঁও জোড়পুকুর বালুর মাঠের প্রধান ফটক এলাকায় অভিযানে যায় ডিবি। এ সময় প্রতিপক্ষরা ডিবিকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করলে ডিবির সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ হয়।



মন্তব্য চালু নেই