কোমরে দড়ির ধাক্কা, রাস্তায় পড়ে গেলেন মমতা

নোট -বাতিলের প্রতিবাদ দিল্লির রাজপথে নিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্ত্ত শুরুতেই ধাক্কা ! একেবারে আক্ষরিক অর্থে৷ সে ধাক্কায় রাস্তায় পড়েই গেলেন তিনি৷ সামান্য চোটও পেলেন৷ তবে তাতে তাঁর বুধবারের দিনলিপিতে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি৷ কী ভাবে পড়লেন , সে ব্যাখ্যায় উঠে আসছে দিল্লি পুলিশের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন৷অনেকেই বলছেন , যে ভাবে এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়েছে , তা নিতান্ত কাণ্ডজ্ঞানহীনের কারবার৷ বিজয় চক ছাড়িয়ে নর্থ ও সাউথ ব্লকের মাঝের রাস্তা দিয়ে তখন সঙ্গীদের নিয়ে রাইসিনা হিলসে উঠছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷

চতুর্দিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া টিভি ক্যামেরা এবং চিত্রসাংবাদিকদের আটকাতে প্রথম থেকেই দিল্লি পুলিশ মোটা নাইলনের দড়ি দিয়ে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ তৈরি করেছিল৷ দেখে মনে হচ্ছিল একটা চলমান বর্গক্ষেত্র , যার চার দিকের দড়ি ধরেছিলেন প্রায় ষাট জন পুলিশকর্মী৷ মিছিলে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মমতা তখন দড়ির বর্গক্ষেত্রের একেবারে শেষ প্রান্তে৷

আচমকা সামনের দিকে পুলিশের টানে সেই দড়ি মমতার কোমরে ধাক্কা দেয়৷ পিছনের দিকে প্রায় চিত্ হয়ে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী , রাজপথের উপরেই৷ তড়িত্গতিতে উঠে পড়েন ঠিকই , কিন্ত্ত ততক্ষণে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচণ্ড বকাবকি শুরু করেছেন দিল্লি পুলিশের কর্মীদের৷ ধমক দেওয়ারই কথা৷ এ ধরনের মিছিলের ক্ষেত্রে সাধারণত হাত দিয়ে নিরাপদ জায়গা তৈরি করেন পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীরা৷ এ ভাবে দড়ি দিয়ে নিয়ে গেলে যে কোনও সময়ে বড় ঘটনা ঘটতে পারে , সেটা বুঝতেই পারেনি দিল্লি পুলিশ৷ শেষ পর্যন্ত বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি ঠিকই , কিন্ত্ত মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে পড়েছেন , তাতে গুরুতর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ষোল আনা৷

সামান্য চোট পেলেও , মমতা কিন্ত্ত তার তোয়াক্কা করেননি৷ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ফিরে সোজা চলে যান সংসদ ভবনে দলীয় অফিসে৷ সাংসদদের নিয়ে বৈঠকের পরে যখন সময় পেলেন , তখনই ব্যাগ থেকে বের করলেন লম্বা ব্যান্ডএইড৷ রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনকে বললেন লাগিয়ে দিতে৷ পিঠের একেবারে উপরে দোলা সেটি সযত্নে লাগিয়ে দিলেন৷ তখনও দিল্লি পুলিশের আচরণ নিয়ে তৃণমূল সাংসদদের ক্ষোভ যায়নি৷ অনেকে বলছিলেন , দিদি পড়ে যাননি , ওঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ ইচ্ছে করে এ কাজ করেছে দিল্লি পুলিশ৷ রাজধানীতে পুলিশ আবার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে৷ অবশ্য তৃণমূলের তরফে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়নি৷ দিনদুয়েক আগে রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করে লোকসভার প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি উইং জানিয়েছে , তাদের অনুমতি ছাড়া মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ বাদে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে , ছবি তুলতে বা ক্যামেরায় তাঁদের বক্তব্য (বাইট ) নিতে পারবে না সংবাদমাধ্যম৷

মুখ্যমন্ত্রীরাও এই ‘অন্য ’দের তালিকায় পড়েন৷ কোনও সাংবাদিক এই নিয়ম অমান্য করলে দু’দিন সংসদভবনে ঢুকতে পারবেন না৷ কিন্ত্ত এ দিন বেলা সাড়ে বারোটার পরে মমতা যখন সংসদ ভবনে এলেন , তখন সেই নিষেধাজ্ঞা বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে৷ চার দিক থেকে ধেয়ে আসে টিভি ক্যামেরা৷ সাংবাদিকরা ফোন বের করে ছবি তুলতে শুরু করেন৷ ছবিও উঠছে খচাখচ৷ অনেকে আবার ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ডের কর্মীদের প্রশ্ন করেন , ‘আমরা কি কথা বলতে পারব না ? ছবি নিতে পারব না ?’ এ সব কূট প্রশ্ন শুনে সেই কর্মীরা অবশ্য অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন৷

মমতা অবশ্য সেখানে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি৷ শুধু বলেন , ‘আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করি৷ তার পরে তো বলতে পারব৷ ’ তবে কথাবার্তা বলা নিয়ে সাংবাদিকরা নালিশ করায় বলেন , ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও প্রাক্তন সাংসদ৷ এখানে কথা বলতে পারব না কেন ?’এ দিকে দীনেশ ত্রিবেদী তখন ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন৷ শিবসেনা সাংসদরা আসতে দেরি করছেন৷ তিনিই তো শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে৷

বহু দিন পরে দলে কিছুটা গুরুত্ব পাচ্ছেন দীনেশ৷ তাঁর কাছে সকাল থেকেই খবর আসছে , প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত ঠিক আটকে দেবেন শিবসেনা নেতাদের৷ কিছুতেই আসতে দেবেন না৷ খবরটা ভুলও ছিল না৷ প্রধানমন্ত্রী একা নন , শিবসেনা সূত্রের খবর হল , রাজনাথ সিং , নীতিন গড়করি , মনোহর পারিকররা সমানে চেষ্টা করে গিয়েছেন তাঁদের নেতাদের আটকাতে৷ প্রবল চাপ দিয়ে গিয়েছেন৷ সেই চাপে একটাই কাজ হল৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত গীতে বিক্ষোভে এলেন না৷ কিন্ত্ত জনাসাতেক সাংসদ এলেন৷ দীনেশ ভিতরে গিয়ে তাঁদের নিয়ে এলেন৷ হার্দিকের সঙ্গে আবার যোগাযোগ রেখেছিলেন ডেরেক ও ’ব্রায়েন৷ দিদি আগে থেকেই তাঁকে বলে দিয়েছিলেন , এই খবরটা যেন পাঁচ কান না -হয়৷ হার্দিকের সংগঠনের লোকেরা এলে সেটা হবে প্রকৃত চমক৷ শেষ পর্যন্ত সেই চমক দিতে পেরেছেন মমতা৷

এ দিকে প্রায় একটা বাজতে চলল৷ সকলে এসে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত ওমর আসেননি৷ দেড়টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সময় নেওয়া আছে৷ চিন্তার পারদ বেশি বাড়তে দিলেন না ওমর৷ চলে এলেন একটা নাগাদ৷ শুরু হয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল৷ সংসদের গান্ধী মূর্তির কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের অন্দর মোটামুটি দু’কিলোমিটার রাস্তা৷ এমনিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব দ্রুত হাঁটেন৷ তাই হেঁটে এই দূরত্ব অতিক্রম করা তাঁর কাছে কিছুই নয়৷ কিন্ত্ত সকলে তো তাঁর মতো হাঁটতে পারেন না ! তাই তৃণমূলের অনেক সাংসদের এই পথটুকু অতিক্রম করতে বেশ কষ্ট হল৷ আর বর্গক্ষেত্রের মধ্যে থেকে তাঁদের একটা নির্দিষ্ট গতিতে চলতে হচ্ছিল৷



মন্তব্য চালু নেই