কে হচ্ছেন ভারতের পরিবর্তী রাষ্ট্রপতি?

রাজীব চক্রবর্তী, দিল্লি থেকে: ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন‌ এ নিয়ে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অন্দরমহলে আলোচনা এখন তুঙ্গে। প্রাথমিক ভাবে উঠে আসছে প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর যোশি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজদের নাম। পাশাপাশি আরও দুটি নাম নিয়ে কানাঘুষো চলছে।

এঁরা হলেন, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এবং ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু। তবে, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই আলোচনার কোথাও দলের বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানির নাম নেই। ২০১৪–‌তে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে ঘোর আপত্তি তুলেছিলেন এই নেতা। এমনকি বেশ কিছুদিন গোসাঘরে খিল দিয়েছিলেন তিনি।

আগামী জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়াদকাল। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজ্যের বিধায়ক এবং লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিজেপি–‌র হাতে থাকা সাংসদদের সংখ্যার হিসেবে দল কোনও ভাবেই নিজেদের পছন্দের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারবে না। এ জন্য বিরোধীদের একাংশের সমর্থন পেতেই হবে।

তবে, কয়েকটি রাজ্যে পালা বদলের আশায় রয়েছে বিজেপি। তেমনটা হলে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন বিজেপি এবং আরএসএস নেতারা। এখন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিজেপি এবং আরএসএস। ১১ মার্চ রাজ্যগুলির ফলাফল সামনে আসার পর রাষ্ট্রপতি পদে কাকে আনা হবে, তা চূড়ান্ত হবে।

৮৩ বছরের মুরলীমনোহর যখন মাত্র ১০ বছর বয়সি, সেই ১৯৪৪ থেকে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর কর্মকালে ১৯‌৯২ সালে কন্যাকুমারী থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত ‘‌একতা যাত্রা’‌ বের করেছিলেন তিনি। এবং লালচকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই বছরেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। সেবার গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি।

তার আগে ১৯‌৭৫–‌এ ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে জরুরি অবস্থা চলাকালীন ১৯ মাস জেলবন্দী ছিলেন। পরপর ১৯৯৬, ’‌৯৮ ও ’‌৯৯ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সদস্য ছিলেন তিনি।

দলে সুষমা স্বরাজের গুরুত্বও কোনও অংশে কম নয়। ৬৫ বছরের সুষমাকে দেশের শীর্ষপদে আনতে পারলে আরএসএসের বিরুদ্ধে বিরোধীদের দেওয়া ‘‌মহিলা বিরোধী’‌ তকমাটি অনায়াসেই ঝেড়ে ফেলা যাবে বলে মনে করছে দল। মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায় ‘‌ভল মন্ত্রী’ হিসেবে সুনাম রয়েছে তাঁর। তা ছাড়া সব দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের বিষয়টিও মাথায় রাখছে দল। যা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলের সমর্থন পেতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে বিজেপি–‌কে। ‌

তবে, ইদানীং তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল না থাকার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখছেন দলের নেতারা। দলের সূত্র জানাচ্ছে, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। অন্যদিকে, ৭৪ বছরের সুমিত্রা মহাজন বর্তমানে লোকসভার স্পিকার পদে রয়েছেন। ইন্দোর থেকে পর পর ৮ বারের সাংসদ তিনি। আরএসএসের সঙ্গে সুমিত্রার মেলবন্ধন অত্যন্ত ভাল।

এত কিছুর পরেও ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ৫৯ বছরের দ্রৌপদী মুর্মুকে তুলে এনে চমক দেওয়ার কথাও ভাবছেন বিজেপি ও আরএসএস নেতারা। তিনি ওড়িশার আদিবাসী মহিলা। দু’‌‌দশক ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কাজের বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

ভারতের ইতিহাসে এ–যাবৎ কোনও আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পদে বসার সুযোগ পাননি। তাঁকে এই পদের জন্য প্রার্থী করে বিরোধীদের চমক দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই