তরুণী বয়সে কেমন ছিলেন তসলিমা নাসরিন ॥ দেখুন সেই সময়ের কিছু দুর্লভ ছবি
ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এক সময় নাকি আমি কেশবতী ছিলাম। মা তার ঘন কালো কেশ নিয়ে মেতে থাকতেন দিন রাত। নারকেল তেল লাগাতেন, আচড়াতেন, উকুন থাকলে বেছে দিতেন, ঝুঁটি বেঁধে দিতেন, কলাবেনি করে দিতেন। কেশ চিরকাল নাকি আবার তার জন্য ছিল ভীষণ এক ঝামেলা!
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি তার ফেসবুকে কালো কেশবতী কিছু দুর্লভ পাবলিশ করেন ও একটি স্ট্যাটাস দেন। আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য সেই দুর্লভ ছবি ও স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“একসময় আমি কেশবতী ছিলাম। কেশের কিছু দুর্লভ ছবি পেয়েছি। ছবিগুলো (দুটো ছাড়া) আমাদের ময়মনসিংহের বাড়িতে তোলা। মা আমার ঘন কালো কেশ নিয়ে মেতে থাকতেন দিন রাত। নারকেল তেল লাগাতেন, আচড়াতেন, উকুন থাকলে বেছে দিতেন, ঝুঁটি বেঁধে দিতেন, কলাবেনি করে দিতেন। কেশ চিরকালই আমার জন্য ছিল ভীষণ এক ঝামেলা। স্নান করে ভেজা কেশ কী করবো বুঝে না পেয়ে হাতখোঁপা করে ইস্কুলে চলে যেতাম। মা চিরুণি আর ফিতে হাতে নিয়ে পেছন পেছন ডাকতেন। আমার দু’তিনটে কেশ ঝরে পড়লো কী পড়লো না, মা কেঁদে বুক ভাসাতেন। মূলত আমার চুলগুলো আমার জন্য আমার মাথায় ছিল না, ছিল মা’র জন্য। একদিন একটুখানি ডাঙর হওয়ার পর মা’র আবেগের নিকুচি করে কোমর অবধি লম্বা চুলকে ঘাড়ের কাছে ঘচাং। মা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিলেন।
মা’কে সারাজীবন কম কষ্ট দিইনি। মা’র আবেগ নিয়ে কত মশকরা করেছি। এখন মা নেই। এখন দুঃখ হয়। এখন আমার চুলের যা ইচ্ছে তাই হোক, কেউ আহা উহু করবে না। মা তাঁর নিজের চুলগুলো অযত্নে অযত্নে নষ্ট করেছেন। কিন্তু আমার চুলের যত্ন তিনি নিরলস করে গেছেন। ভালোবাসা ছাড়া মা’র দেবার আর কিছু ছিল না। ওই ভালোবাসাই সম্পূর্ণ উপুড় করে ঢেলে দিয়েছেন। আমার অনেক কিছু ছিল। আমি আর কাউকে দিতে কার্পণ্য না করলেও মা’কে দিতেই করেছি। ভেবেছি, মা-ই তো। মা’কে আবার দিতে হবে কেন। মা’কেই যে দিতে হয়, বুঝিনি।”
মন্তব্য চালু নেই