কী আছে লন্ডনের মাটির তলায়

লন্ডনের মাটির তলায় কী আছে। প্রশ্নটা পড়েই হয়তো পাঠক মনে মনে বলে ফেলেছেন, ‘লন্ডনের মাটির তলায় মাটি আছে’। আর যারা একটু উৎসুক গোছের মানুষ তারা হয়তো লন্ডনের মাটির তলায় গুপ্তধনের কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু যে দেশ প্রাচ্যের সম্পদ লুট করে নিজেদের দেশ গড়েছে তাদের পক্ষে মাটির তলায় গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার বিষয়টি কিঞ্চিত হলেও হাস্যকর। তাহলে কী আছে লন্ডনের মাটির তলায়?

গোটা লন্ডন শহরের মাটির তলায় আছে দীর্ঘ সব টানেল। বর্তমান অনেক লন্ডনবাসীও হয়তো জানেন না যে তারা দীর্ঘ সব টানেলের উপর বাস করছেন। আর এই সব টানেলের মুখ হলো লন্ডনের বালহ্যাম পাহাড়ের গায়ের একটি ছোট্টো কালো দরজা। এই দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারবেন লন্ডনের মাটির তলার রহস্যময় টানেল দুনিয়ায়। মাটির নিচের এই দুনিয়ায় পৌছানোর জন্য আছে একটি লিফট। ধুলায় ভরপুর টানেলের গায়ে একটু পর পর দেয়া আছে কিছু লাইট। যে লাইটের আলোয় আপনাকে পথ চলতে হবে টানেলের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত।

লন্ডন শহরের উৎপত্তির সময় থেকেই নগর পরিকল্পনাবিদদের এই টানেলের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। যদিও প্রথমদিকে টানেল বানানোর অন্যতম কারণ ছিল বর্হিশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া। তবে পরবর্তী সময়ে এই টানেলকে ট্রেন চলাচলের পথ বানানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এক হিসেবে দেখা যায় লন্ডনের মাটির তলায় ২০টিরও বেশি রেলস্টেশন আছে। যেগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না। প্রায় ২৩ মাইল দীর্ঘ এই রেললাইন এখন পুরো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তবে লন্ডনের জন্য সবচেয়ে দুসংবাদ হলো, আজকের লন্ডন শহর প্রায় নদীশূন্য। অথচ প্রায় ডজনখানেক নদীকে ধ্বংস করা হয়েছিল এই টানেল বানানোর সময়।

যুদ্ধের সময় এই টানেলকে বহু কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রথমত যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য এখানে মিনি হাসপাতাল খোলা হয়েছিল। কিন্তু নিঃশ্বাসের সমস্যা হওয়ার কারণে মাটির তলায় হাসপাতালের কার্যক্রম সেসময় চালানো সম্ভব হয়নি। তারও আগে লন্ডনের হেনরি সপ্তম তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস খোলেন এই টানেলের একাংশে। এখনও সেই অফিস এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি দেখতে পাওয়া যায় টানেলে।

প্রায় আট হাজার মানুষ আত্মগোপন করার মতো বন্দোবস্ত আছে টানেলে। আর সঙ্গে আছে বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য শোবার জায়গা, বাথরুমের জায়গা, খাবারের ঘর এমনকি ছোটো একটা শরীরচর্চা কেন্দ্রও আছে। পুরো টানেলটিকে দেখভাল করার জন্য দশহাজার কর্মীবাহিনী সদা প্রস্তুত থাকেন। বর্তমানে টানেলটিকে পুর্নসংস্কার করে আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে ব্যবহারের উপযোগি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্যামেরন সরকার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অন্তত ২৪টি ট্রেন একসঙ্গে চলাচল করার মতো ব্যবস্থা থাকবে টানেলটিতে।



মন্তব্য চালু নেই