কিউবায় কাস্ত্রোর কোনো স্মৃতিচিহ্ন থাকবে না, কেন এই ঘোষণা দিল প্রেসিডেন্ট রাউল?
বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর নামে তার নিজ দেশ কিউবাতে থাকবে না কোনও স্মৃতিচিহ্ন। এই নেতার শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে লাখো মানুষের জমায়েতে রাখা বক্তব্যে তার ভাই ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো জানিয়েছেন, ফিদেলের ইচ্ছা অনুযায়ীই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফিদেলের শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে রাউল কাস্ত্রো জানান, ‘এই বিপ্লবী নেতা সবসময় ব্যক্তিপূজার বিরুদ্ধে ছিলেন। আর ফিদেলের ইচ্ছা অনুযায়ী, তার নামে কোনও স্মৃতিচিহ্ন বা সড়কের নামকরণ করা যাবে না। এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর রাত ১০টা ২৯ মিনিটে ৯০ বছর বয়সে মারা যান ফিদেল কাস্ত্রো। এর ঘণ্টাখানেক পর রাউল কাস্ত্রো আনুষ্ঠানিকভাবে ওই বিপ্লবীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে নয় দিনের শোক পালনের ঘোষণা দেয় কিউবার সরকার। সেই সময়েই কাস্ত্রোর দেহভস্ম পুরো দেশজুড়ে ভ্রমণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ফিদেলের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাকে দাহ করা হয়। ব্যক্তিপূজা থেকে নিজের নামটি দূরে রাখার জন্যই তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন।
জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজধানী হাভানার হোসে মার্তি মেমোরিয়ালে ২৮ ও ২৯ নভেম্বর তার ভস্ম রাখা হয়। ২৯ তারিখ বিকালে হাভানায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিন থেকে শুরু হয় কাস্ত্রোর দেহভস্মের দেশব্যাপী যাত্রা। ১৯৫৯ সালে কিউবা বিপ্লবের সময় যে পথে দেশব্যাপী যাত্রা করেছিলেন কাস্ত্রো, সে পথেই যায় এবারের যাত্রা।
নয়দিনের শোক শেষে ৪ ডিসেম্বর ওই যাত্রার ইতি টানা হচ্ছে সান্তিয়াগোর সান্তা ইফিজেনিয়া সমাধিস্থলে। এখানেই সমাহিত করা হয় ফিদেলকে। যেখানে শায়িত আছেন কিউবার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হোসে মার্তিসহ কিউবা বিপ্লবের বহু কাণ্ডারি।
ফিদেলের অবদানের কথা তুলে ধরে রাউল বলেন, ‘এ হলো এক অপরাজিত ফিদেল। যিনি নিজের উদাহরণ সামনে রেখে আমাদের ডাক দিয়ে যাচ্ছেন।’ এ সময় আবেগাপ্লুত জনগণ স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ফিদেল দীর্ঘজীবী হোন’, ‘আমি ফিদেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, কিউবায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যে কোনও বাধা, অস্থিরতা বা হুমকি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’ সান্তিয়াগোর সেন্ট্রাল প্লাজায় তখন তিল ধারণেরও জায়গা নেই।
শ্রদ্ধা জানাতে তার জন্মস্থান সান্তিয়াগোতে জমায়েত হয়েছেন লাখো মানুষ। কিউবাসহ বিভিন্ন দেশের নেতা ও আবেগাপ্লুত জনতা অংশ নিয়েছেন এই বিদায় অনুষ্ঠানে। এতে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়ার নেতৃবৃন্দ এবং আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা দিয়েগো মারাদোনা। ওই অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিদেলের ভাই এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো।
এর আগে ফিদেল কাস্ত্রোর দেহভস্ম তার জন্মস্থান সান্তিয়াগোতে পৌঁছানোর পর সমবেত বিপুল সংখ্যক মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফিদেল চিরজীবী হোন’ স্লোগান দিতে থাকেন।
ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে কিউবার মাটিতে সূচিত হয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সামরিক শাসক জেনারেল বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরের পাঁচ দশক কিউবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কিউবাকে ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ ঘোষণা করেন ফিদেল। যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের অবকাশ যাপনের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে থাকা দেশটিকে রূপান্তর করেন সমৃদ্ধ ভূমিতে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ‘একনায়ক’ হলেও ফিদেল সারাবিশ্বে সমাজতন্ত্রের পথের সংগ্রামীদের কাছে তিনি বীর বিপ্লবী। কিউবার অধিকাংশ মানুষ দেশকে দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নায়ক হিসেবে দেখেন ফিদেলকে। সূত্র: রয়টার্স।
মন্তব্য চালু নেই