রাজধানীতে একদিনেই পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ৮
‘কপালে এই লেখা ছিল জানলে ঢাকায় আসতাম না’

আবু তাহেরের বয়স ৮০। গ্রামের বাড়ি পাবনার বেরা উপজেলায়। বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রী মাহেরা বেগমের পা ভাঙ্গার চিকিৎসার জন্য সবেমাত্র ঢাকায় এসেছেন। গাবতলী থেকে বাসে উঠে হাজারীবাগ যাওয়ার পথে ভেড়িবাধ এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন তিনি ও তার বড় ছেলে আবু বকর। বাস থেকে নামতে গিয়ে পা ভেঙ্গে যায় আরেক ছেলে সুজনের। এখন পরিবারের এই চার সদস্যের স্থান হয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
এই ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে আবু তাহেরের স্ত্রী মাহেরা বেগম। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি এখন কি করবো, কার কাছে যাবো, বুঝতে পারছি না। আমার চিকিৎসা করাতে এসে মানুষটা (স্বামী) এইভাবে পুড়েছে, ছেলের পা ভেঙ্গেছে। কপালে এই লেখা ছিল জানলে ঢাকায় আসতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমার চিকিৎসা লাগবে না। আমার কথা কানে নিলে আজ এই দশা হতো না।’
ব্রাদার্স পরিবহন নামে একটি বাসে শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুনের ওই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আবু তাহেরের ১৪ ভাগ শরীর দগ্ধ হয়েছে। আবু তাহেরের বড় ছেলে আবু বকরের হাত ঝলসে গেছে।
এই ঘটনায় শুধু আবু তাহেরের পরিবারের সদস্যরাই নয়, ওই বাসে থাকা আরও চারজন দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে বিল্লাহ হোসেন নামে এক যাত্রীর ২৫ ভাগ ও মো. আরমান নামে এক যাত্রীর ১২ ভাগ শরীর দগ্ধ হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। নূরজাহান নামে এক যাত্রীর ৪ ভাগ শরীর এবং আরো দুইজন অল্প পরিমাণে দগ্ধ হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্শ সঙ্কর পাল বলেন, ‘দগ্ধদের মধ্যে বিল্লাল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কারন বিল্লালের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘২৫ ভাগ দগ্ধ রোগীরা সাধারণত ঝুঁকিমুক্ত থাকে। কিন্তু যদি শ্বাসনালী পুড়ে যায় তবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।’
এর আগে রাত ৮টার দিকে মৎস্যভবন এলাকায় পুলিশের গাড়িতে ছোড়া পেট্রোল বোমায় মো. মোর্শেদ নামে এক কনস্টেবল দগ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪ পুলিশ সদস্য।
শনিবার রাজধানীতে দুই ঘটনায় ৮ জন দগ্ধ হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও ৬ জন। এছাড়া আরো অন্তত ৬টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুধু শনিবারেই নয় অবরোধে প্রতিদিনই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। সবমিলে রাজধানীতে পেট্রোল বোমা আতঙ্ক বাড়ছে। টানা অবরোধে রাজধানীতে শতাধিক বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মগবাজারে একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ নামে এক চালক নিহত হয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বোসে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পেট্রোল বোমা। এছাড়া এই বোমা বানানোর উপকরণও সহজলভ্য। কম খরচে বানানো যায় বলে দুর্বৃত্তরা এখন এই দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এই ধরণের কাজে রাজনৈতিক দলের কর্মীরাতো যুক্ত রয়েছেই, এর বাইরে অনেকেই টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে থাকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় এই ধরণের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে এ বিষয়টি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে যারাই এই ধরণের কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।’
মন্তব্য চালু নেই