‘কথা নয় অ্যাকশন দেখতে চাই’

বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান অবরোধ-হরতালে নাশকতা-বোমাবাজি প্রতিহতে আর কথা নয় অ্যাকশন দেখতে চায় সরকারি ও বিরোধী দল।

রোববার দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে সাংসদরা এ কথা বলেন।

জাসদের কার্যকরী সভাপতি মাঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, অক্ষমের আস্ফালন যেমন সহ্য করা যায় না, তেমনি শক্তিমানের কান্নাও কিন্তু সহ্য করা যায় না। বেগম খালেদা জিয়া সভ্যতার-নিয়মতান্ত্রিকতার-মানবিকতার-মনুষত্যের সমস্ত রেখা লঙ্ঘন করেছেন। এ ধরণের পরিস্থিতিতে সমাজ এক ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি আরো বলেন, এই পার্লামেন্ট যদি মনেই করে খালেদা জিয়া একজন সন্ত্রাসী নেত্রী। তাহলে সন্ত্রাসী নিয়ে নানা ভাবে কাব্য-কবিতা করার কিছু নাই। পার্লামেন্ট কথা বলার জায়গা আমরা কথা বলছি। দেশে এক্সিকিউটিভ বডি আছে। দেশের আইন আছে, নিয়ম আছে। শুধু মাত্র কাব্যরচনা করে দিনের পর দিন পার করবো এটা কিন্তু ঠিক নয়।

উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমার-আপনার শিশু যখন আগুন নিয়ে খেলে তখন তাকে আপনি দুইটা থাপ্পর দিয়ে আগুন থেকে সরিয়ে দেন। কারণ শিশু আগুন নিয়ে খেলার মাজেজা বুঝে না। বয়স্ক লোক যখন আগুন নিয়ে খেলে তখন সে হয় হারামী। হারামীকে শুধু মাত্র তুলে দেওয়ার কথা বলে লাভ হয় না। তাকে এর থেকে বিরত করার জন্য যা যা করণীয় তা তা করতে হবে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে ১৬ কোটি মানুষের দিকে তাকিয়ে এই অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করুন।

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাকে পেট্রোল বোমার রাজনীতি থামাতে হবে। না হলে একদিন আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। এ পর্যন্ত ৪২জন মানুষ মারা গেছে। তার জন্য খালেদা জিয়া দায়ী তার জোট দায়ী। কত বিবেক বর্জিত হলে এটা সম্ভব। এই ৪২ খুনের জন্য ৪২টি মার্ডার কেস হবে। তার জন্য হুকুমের আসামী হবেন খালেদা জিয়া।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। যিনি বাংলাদেশর শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন, হোলি খেলছেন। এমন একমজন ক্ষমতালিপ্সু নেত্রীর কারণে আমাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে না। তাই বিরোধী নেত্রী যে বিষয়টি উত্থাপন করেছে। তার সমাধান চাই।’

এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর করার আইনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে বিশেষ একটি আইন করার দরকার। সামরিক কোর্ট করে যাতে এদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় এমন একটি আইন করা হোক।’

ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আজ এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন রক্ষায় শুক্রবার করে পরীক্ষা শেষ করা যাবে না। তাদের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পিছু হটার কোন কারণ নাই। যারা এধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রীকে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যারা এসব নাশকতা, অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মতিন খসরুকে উদ্দেশ্যে করে শামীম ওসমান বলেন, খুব বিনয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে একটি কথা বললেন যে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে এটি বন্ধ করেন।’ কিন্তু কার কাছে আপনি (মতিন খসরু) আল্লাহর ওয়াস্তে বন্ধ করার আহ্বান করলেন? তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে আমাদের অ্যাকশনে যেতে হবে।

শামীম ওসমান বলেন, এখানে যারা বসে আছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রজম্ম। এই প্রজম্ম ওই পরাজিত শক্তির কাছে পরাজিত হতে পারি না। ‘বাংলার মানুষ এখন অ্যাকশন দেখতে চায়’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা আর কথা শুনতে চাই না। এখন অ্যাকশন দেখতে চাই।

তারানা হালিম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার, পবিরারদের পুর্নবাসন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ আমি একজন আইনজীবি হিসেবে ও সংসদ সদস্য হিসেবে একমত। আমরা জানি পেনাল কোডে আছে গুরুতর জখমের জন্য শাস্তির বিধান। আমরা পৃথক আইন চাই। যে রকম এসিড নিক্ষেপের জন্য হয়েছে। যারা নির্দেশ দেবে, সরবরাহ করবে। এদের জন্য পৃথক পৃথক আইন চাই। আর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে আর্থিক সাহায্য, পুর্নবাসন ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে ওই হামলার নির্দেশদাতাদের কাছ থেকে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই পেট্রোল বোমাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ বলেন, হরতাল-অবরোধে কোন রাজনৈতিক দলের নাশকতামূলক, সহিংসতামূলক কর্মকা- হতে পারে না। আমাদের সবাই মিলেমিশে এক হয়ে থামাতে হবে। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লা-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

কিছু কিছু এলাকায় জনগণই এগিয়ে আসছে  যেমন করেই হোক ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, নিরীহ মানুষের কথা চিন্তা করে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ভাবে একটা দেশ তো চলতে পারে না। ‘হরতাল-অবরোধ কাদের জন্য, কেন এবং কীসের জন্য? এমন প্রশ্ন আজ জনগণের মনের মধ্যে দেখা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পয়েন্ট অব অর্ডারে আরো বক্তব্য রাখেন নুরজাহান বেগম, নুরুল ইসলাম সুজন, আবদুল মান্নান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই