কতো লোক একসঙ্গে মারা গেলে গণহত্যা বলা যায়?
![](https://archive1.ournewsbd.net/wp-content/uploads/2015/07/zHQcEAiRn7Ig.jpg)
‘গণহত্যা’- শব্দটার অর্থ কি? কতোজন লোক এক সঙ্গে নিহত হলে তাকে গণহত্যা বলা যায়? গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার অপরিহার্য শর্ত কি রাজনীতি? গত দুই বছর কতো সহস্রবার যে আমরা ‘গণহত্যা’ শব্দটি শুনেছি তার কোনো পরিসংখ্যান নাই। ‘গণহত্যা’ ‘গণহত্যা’ বলে তসবিহ গুণতে গুণতে আমাদের এক শ্রেণীর রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী লন্ডন-আমেরিকা, জাতিসংঘে দৌড়াদৌড়ি করেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে যদি শতাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে, সেটাকে কি গণহত্যা বলা যায়? একদিনের একটি ঘটনায় যদি ১৭/১৮ জনের মৃত্যু হয়, সেটি কি গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হবে?
একদিনে একই ধরনের ঘটনায় সারা দেশে যদি ৪০ জনের মৃত্যু ঘটে- সেটি কি ‘গণহত্যার’ ‘মর্যাদায়(!)’ অভিষিক্ত হতে পারে?- আমি জানি, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন।
কোনো মৃত্যুর সাথে রাজনীতির ছোঁয়া না থাকলে সেই মৃত্যুতে আমাদের রাজনীতিক, মিডিয়া, সুশীল সমাজ কেউই ‘উত্তেজনা’ বোধ করেন না। নইলে এই ঈদ মৌসুমে কেবল সড়কে শতাধিক লোকের মৃত্যুর ঘটনার পরও তা নিয়ে কোথাও তেমন কোনো উত্তেজনা চোখে পড়েনি কেন? সড়ক দুর্ঘটনা কি কেবলি দুর্ঘটনা? না কি খুন?
সড়ক দুর্ঘটনাকে আমি হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করি। পৃথিবীর প্রায় সবদেশই তাই করে। সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো নাগরিকের মৃত্যু হলে গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। গাড়ি চালককে খুনী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে এই যাবতকালে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ হত্যার দায়ে কারো বিচার হয়েছে কি? মিডিয়ার বন্ধুরা এ ব্যাপারে ভালো তথ্য দিতে পারবেন।
আমরা ধারণা, গড়ি চাপা দিয়ে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ হত্যার অপরাধে বাংলাদেশে অন্তত কোথাও কোনো বিচার হয়নি। এই দেশে এরশাদ নামের এক স্বৈরশাসক খুনীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা যাবে না বলে আইন করেছিলেন। এই দেশে শাহজাহান খান নামের মন্ত্রীর মর্যাদাধারী শ্রমিক নেতা আছেন- যিনি- খুনীদের গায়ে যাতে ফুলের টোকাও না লাগে তার জন্য তৎপর থাকেন। আর রাষ্ট্রের আইন? যতোক্ষণ না নিজেদের স্পর্শ করে, ততোক্ষণ এ নিয়ে ভাববার সময় কই তাদের।
রাষ্ট্র, রাজনীতিকরা স্বেচ্ছায় জনকল্যাণের পাশে দাঁড়াতো- এগুলো তো প্রাগৈতিহাসিক কালের কথা। এই কালে এই ধরনের ভাবনাও হাস্যকর। এই কালের রাজনীতিকদের কাছে ‘জনকল্যাণ’ একটি হাস্যকর- পশ্চাদমুখী ধারণা। কিন্তু জনগণের সমস্যা কোথায়?
একটি শিশু কূপের ভেতর পড়ে গেলে যে মানুষ রাত জেগে প্রতিবাদ করে, রাজনের হত্যাকাণ্ডে যে মানুষ ফুসেঁ ওঠে, সেই মানুষই এক সপ্তাহের ব্যবধানে শতাধিক মানুষ হত্যার ঘটনায় উদাসীন থাকে কিভাবে? তা হলে প্রতিবাদ, প্রতিক্রিয়া- এগুলোও কি মানুষের একধরনের স্বেচ্ছাচার? লোক দেখানো সুশীলতা? না কি অন্য কিছু? কি সেটা?
সড়ক দুর্ঘটনাকে আমি আর ‘দুর্ঘটনা’ বলি না। আমি বলি ‘সড়কে হত্যাকাণ্ড’। সড়কে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য আমি রাষ্ট্রকে, সরকারকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আর মন্ত্রীকে দায়ী করি। সড়কে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের আমি খুনী বলে অভিহিত করি। কারণ, তাদের উদাসীনতা, নিষ্পৃহতার কারনে ‘সড়ক খুনীরা’ এতো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পেরেছে।
ঈদের মতো একটি উৎসবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ করতে গিয়ে লাশ হয়ে যাওয়া শতাধিক মানুষের মৃত্যুর দায়ভার সম্পূর্ণভাবেই রাষ্ট্রের, এই সরকারের।
আর হে মানুষ, সরকারকে তার দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টা ধরিয়ে দিয়ে বড় একটা ধাক্কা দিতে না পারলে এই লাশের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সেই সংখ্যায় একদিন আমি, তুমিও শামিল হয়ে যাবো। এখন তুমিই ভাবো, তোমার কি করণীয়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আওয়ার নিউজ এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
মন্তব্য চালু নেই