এ সপ্তাহে ফাঁসির রায় কার্যকর হচ্ছে না

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কামারুজ্জানের ফাঁসি রায় কার্যকর হচ্ছে না এ সপ্তাহে।

আগামী সপ্তাহের মাঝমাঝি সময়ে তার ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফাঁসি কার্যকর করতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই। শর্ট অর্ডার পেলেই হয়ে গেলো।

বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে জরুরি ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী এ কথা জানান। এর আগে দুপুরে আইজি প্রিজন সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে জরুরি বৈঠক করেন আনিসুল হক।

ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করার সুযোগ থাকবে। যখন থেকে তিনি ফাঁসির আদেশের কথা জেনেছেন তখন থেকে সাত দিনের মধ্যেই প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হবে। রায় শোনার সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোন সময় ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

আইনমন্ত্রী বক্তব্যে স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত সাত দিনের আগে ফাঁসি কার্যকর করবে না সরকার। অবশ্য কামারুজ্জামান ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানালে যে কোনো দিন ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে।

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার সময়ে দেখেছি রিভিউর আবেদনের সুযোগ বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সেটা ধরে নিয়েই বলতে পারি এবারেও রিভিউ আবেদনের সুযোগ থাকবে না। মন্ত্রী বলেন, জেল কোড ও আইন মেনে কারা কর্তৃপক্ষকে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর ইতিমধ্যে দুই দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। সেই হিসেবে আর পাঁচ দিন সময় পাচ্ছেন কামারুজ্জামান। এ ক্ষেত্রে আজ রায় কার্যকর হচ্ছে না, আর বৃহস্পতিবারও যদি রায়কার্যকর না হয়, সেক্ষেত্রে শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ। এ জন্য আগামী সপ্তাহের রোববার কিংবা সোমবার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে।

এর আগে বুধবার দুপুরে ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আইনমন্ত্রী গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে কথা বলেন আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সঙ্গে। বুধবার দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী ও আইজি প্রিজন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরে আইনগত বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।

এদিকে, বুধবার দুপুর ১টায় আসামির আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন বলেছেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের লিখিত কপি বের না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা বেআইনি হবে। একই সঙ্গে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করলে কামারুজ্জামানের শাস্তি কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অপরদিকে, বুধবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, কামারুজ্জামানের আপিলের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা না করলে তার রায় যেকোনো সময় কার্যকর করা যাবে। তবে ফাঁসির রায় কার্যকরের বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

অন্যদিকে বুধবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করতে পারেন। বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর। সরকার যখন চাইবে তখনই ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে। কেননা এ মামলায় আপিলের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রয়োজন নেই। এমনকি আপিল বিভাগের লিখিত আদেশও কারাগারে পৌঁছানোর প্রয়োজন নেই। কারা কর্তৃপক্ষ শুধু জানবে, ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছেন। তবে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন।’সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের পরিবারের ১০ সদস্য তার সঙ্গে প্রায় ৫০ মিনিট একান্তে কথা বলেন।

কামারুজ্জামনের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাত ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য এবং আইজি প্রিজনের সঙ্গে আইন মন্ত্রীর বৈঠকের পর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। তবে সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আজ কামারুজ্জামানের ফাঁসি হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল

গত বছরের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। গত সোমবার আপিলের চূড়ান্ত রায়েও ফাঁসির আদেশ বহল রাখেন আপিল বিভাগ।



মন্তব্য চালু নেই