“এ যুদ্ধ থামানো অসম্ভব”
ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস তাদের মতাদর্শ বিরোধীদের ওপর সবসময়ই নির্মমতা চালিয়ে আসছে। প্যারিসে ভয়াবহ হামলার মধ্য দিয়ে পশ্চিমাবিশ্বও দেখেছে এই গোষ্ঠীটির নির্মমতা। ১২ নভেম্বর বৈরুতে ৪৩ জনকে, ১৩ নভেম্বর বাগদাদে ২৬ জনকে হত্যা করেছে আইএস। ১৪ নভেম্বর প্যারিসে ভয়াবহ সিরিজ হামলায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করলো এই সংগঠনটি। এসব হামলা বন্ধ করা পারতপক্ষে অসম্ভব। কারণ, এদের হামলার লক্ষ্য সাধারণ জনগণ এবং হামলাকারীরা আত্মঘাতী। আত্মঘাতী এসব হামলাকারী নিজেদের লক্ষ্য পূরণে প্রাণ বিসজর্নে একটুও কার্পণ্য করবে না।
প্যারিসে হামলার পর এক বিবৃতিতে এর দায় স্বীকার করে আইএস জানায়, সিরিয়াতে আইএস বিরোধী বিমান হামলার কারণেই ফ্রান্সে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় অংশ নিয়েছে সাত/আটজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এবং বন্ধুকধারী।
এর আগেও চলতি বছরের শুরুতে শার্লি হেবদোর কার্টুনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে অতর্কিত হামলা চালায় আইএস। কিন্তু এবারের হামলা ছিল আগের চেয়ে অনেক বেশি সুপরিকল্পিত।
ইরাক এবং সিরিয়াতে প্রতিনিয়ত চলা যুদ্ধের চেয়ে প্যারিসের হামলার ধরন হয়তো ভিন্ন। কিন্তু এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আইএসের যুদ্ধ করার ক্ষমতা।
কয়েক বছরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা, শক্তিশালী অস্ত্রভান্ডার, গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী আইএস এখন অনেক শক্তিশালী এবং পরিপূর্ণ।
২০১৪ সালে আত্মঘাতী হামলার এবং বিষ্ফোরক বোঝাই গাড়ি বিষ্ফোরণের মাধ্যমে ইরাকের বাগদাদ এবং মধ্যাঞ্চলীয় কিছু জায়গা দখল করে আইএস। সেই সময়ে তাদের উদ্দেশে ছিল দুর্বার ঘাঁটি তৈরি এবং শত্রু ধ্বংস। কিন্তু সেই সময়ে কয়েক হাজার শিয়া সম্প্রদায়ের এই দুর্দশার দিকে নজর দেয়নি বিশ্বনেতারা। প্রতিবছরই ইরাকে বেসামরিক লোকের মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১২ সালে চার হাজার ৬২৩ জন, ২০১৩ সালে নয় হাজার ৪৭৩ জন এবং ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ৪৫ জন মারা যায়।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর কাড়তে আইএস প্রায়ই বিদেশি ত্রাণ কর্মী, সাংবাদিকদের জিম্মি করে শিরোচ্ছেদ করেছে। সেই শিরোচ্ছেদের ভিডিও তারা প্রকাশও করেছে। মার্কিন সাংবাদিক এবং ত্রাণকর্মীকে হত্যার ভিডিও প্রকাশের পরই আইএসকে দমন করতে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয় ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ।
প্যারিসে হামলার মাধ্যমে আইএস মূলত আন্তর্জাতিক মহলে স্পষ্ট এক বার্তা দিলো যে, তাদের ধ্বংসে যারাই বিমান হামলা বা যেকোনো ধরনের হামলা চালাবে তাদেরই উপযুক্ত প্রতিত্তুর দেয়া হবে। সেই হামলা হতে পারে গ্রামাঞ্চল থেকে গোছানো নগরেও। সেই সঙ্গে হামলার পূর্বে কোন স্থানে এবং কিভাবে হামলা হবে এই সম্পর্কে ধারণা করা সম্পূর্ণ অসম্ভব।
তিউনিসিয়ার সমুদ্র সৈকতে ব্রিটিশ পর্যটকদের ওপর হামলা থেকে শুরু করে প্যারিসে রক কনসার্ট হলে হামলার ঘটনার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ ধারণা করতে পারেনি যে কী ঘটতে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সিরিয়া এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হামলায় দুই হাজারের বেশি আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। সিরিয়া এবং ইরাকের আইএস বিরোধী এই অভিযানের প্রতিশোধই কী তবে ছিল প্যারিস হামলা!
মন্তব্য চালু নেই