এ দুঃখ কোথায় লুকাবেন মোদি?
এক একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছিলেন ৭৬ বছর বয়সী এই মারাঠি কৃষক কাশিরাম ইন্দোর। স্বপ্ন ছিল ফসল কেটে ঘরে তুলবেন তিনি। সন্তান আর স্ত্রীর জমানো বায়নাগুলো পূরণ করবেন সেই ফসল বেচেই। কিন্তু জমিতেই শেষ যতো স্বপ্ন। অনাবৃষ্টিতে পুড়ে গেছে গাছগুলো। বাকি জমি ধ্বংস করেছে কীট।
সূর্যের তাপে পুড়ে যাওয়া ক্ষেতে নিজেই সাজালেন চিতা। তারপর চিতায় উঠে নিজেই জ্বালিয়ে দিলেন আগুন। আর সেই আগুনে ধীরে ধীরে পুড়তে থাকে কাশিরামের সারাজীবনের সব স্বপ্ন- অতীত, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ।
লোকজন ছুটে এসেছিলেন কাশিরামকে বাঁচাতে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ কৃষক এতোটুকুও সময় ব্যয় করেননি তার স্বপ্নগুলোকে ছাই করে দিতে। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলের আকোলা জেলার মামারখেড় গ্রামেই ঘটে গেলো এই হৃদয় বিদারক ঘটনা।
কাশিরামের সন্তান ৪৫ বছর বয়সী সারংধার বলেন, ‘আমার বাবা কখনো কারও কাছ থেকে এক রুপিও ধার করেননি। কারণ তিনি কখনো ঋণের চক্করে পরতে চাননি। দীর্ঘ খরার কারণে আমরা সবাই হতাশ। আর এই হতাশাই আমার বাবাকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়।’
কৃষক আত্মহত্যাকারীর দেশে পরিণত হয়েছে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। গত ৫০ দিনে শুধু দেশটির মহারাষ্ট্রেই ৪২জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ঋণ সমস্যা, খরা, সারের অপ্রতুলতা ইত্যাদি কারণে কৃষকরা আত্মহত্যা করছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি মারফত জানা যায়। আর গত এক দশকে বিদর্ভের ক্ষরাগ্রস্ত ৬ জেলায় ১০ হাজারের বেশি চাষি আত্মহত্যা করেছে।
স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, কাশিরাম মাঠের মাঝখানে চিতা বানিয়ে নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এসময় গ্রামবাসী তাকে সাহায্য করার আগেই তিনি মারা যান।
মহারাষ্ট্র সরকার চলতি বছরের শুরুর দিকে মোট সাত হাজার গ্রামকে খরা পীড়িত অঞ্চল বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ঘোষণা পরবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়নি। ফসলের মাঠগুলো যেমন তার ঊর্বরতা হারিয়েছে তেমনি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আগামী বছর যদি এই অঞ্চলে বর্ষা না হয় তাহলে স্থানীয়দের অধিকাংশই অন্যত্র চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অথচ মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে ভারতকে দারিদ্রমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিদর্ভের ক্ষরাগ্রস্ত মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন ছাড়া কী করে দারিদ্রমুক্ত হবে মোদির ভারত? আর এ দুঃখই বা লুকাবেন কোথায় মোদি?
মন্তব্য চালু নেই