এ কেমন নদী? কোথাও পানির দেখা নেই, চারিদিকে শুধুই এসিড!
বিশাল আফ্রিকার ছোট্টো একটি দেশ জাম্বিয়া। গোটা বিশ্ব দূরে থাক, স্রেফ আফ্রিকার ক্ষমতার চর্চার তলানিতেও কোনো অবস্থান নেই এই দেশের। তবু জাম্বিয়ারই একটি প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসীরা একটি বহুজাতিক খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের আদালতে তাদের নদীর পানি নষ্ট করে দেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলা করার ফলে এখন বিশেষজ্ঞরা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্মীরা জাম্বিয়ার হিপ্পো পুল গ্রামটিতে ছুটে যাচ্ছেন, সত্যি ঘটনার অনুসন্ধানে।
হিপ্পো পুল গ্রামের অধিবাসীরা তাদের নিকটবর্তী কাফু নদী থেকে বোতলে করে পানি সংগ্রহ করেছেন। সারাদিন সূর্য থাকার কারণে নদীর পানিতে সামান্য হাতও দেয়া যায় না। দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, কাফু নদীর পানিতে এখন আর কোনো প্রাণীও চোখে পরে না। রাতের আধার নামলে নদীর পানি ঠাণ্ডা হলে তবেই গ্রামবাসী একমাত্র নদী থেকে বালতি ভর্তি করে পানি নিয়ে যান বাড়িতে। এই পানি দিয়েই তারা রান্নাসহ যাবতীয় কাজ করছে।
হিপ্পো পুল, কাকোসা, শিমুলালা গ্রামবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী মুসিশিমা এবং কাফু নদী ইতোমধ্যেই এসিডে পূর্ণ হয়ে গেছে। জাম্বিয়ার বৃহত্তম তামা খনিটি এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায়, খনি থেকে নির্গত সকল রাসায়নিক পদার্থ এই নদীগুলোতে মিশে যায় এবং গোটা নদীটিই বিষাক্ত হয়ে যায়। জাম্বিয়ার এই তামা খনিটি খনন করছে ভেদান্ত রিসোর্সেস প্ল্যাক নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি। এই কোম্পানিটিকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও, তাতে কোনো কাজ হয়নি। আর শেষমেষ বাধ্য হয়েই মূলত হিপ্পো পুলের গ্রামবাসী ওই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে নামে।
বহুজাতিক কোম্পানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি সম্প্রতি প্রকাশ হয় এবং সেগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি’র কাছে চলে যায়। সেই ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্যাদি থেকে জানা যায়, ভেদান্ত রিসোর্সের পক্ষে জাম্বিয়ার কনকলা কপার মাইন নামের প্রতিষ্ঠানটি খনির বিষাক্ত সালফিওরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ সরাসরি নদীতে ফেলছে। তবে এক্ষেত্রে কনকলা কপার মাইনকে দোষারোপ করা যাচ্ছে না। কারণ নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৪ সালে এই খনিটির মালিকানা পরিবর্তনের পর তা চলে যায় ভেদান্ত রিসোর্সের হাতে। তারা খরচ কমিয়ে তামা উৎপাদনের দিকে নজর দিতে বলে স্থানীয় খনি কোম্পানিটিকে।
কিন্তু কনকলা কোম্পানির পক্ষ থেকে এই অভিযোগগুলোকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। উল্টো তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, কোম্পানিটি পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ৫৩০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এই প্রকল্পের মধ্যে ছিল বাজে পাইপলাইনগুলো ঠিকঠাক করা, দূষণের শিকার বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষন করাসহ ইত্যাদি। যদিও গোটা খনি অঞ্চলে বিবিসির সাংবাদিক নমসা মাসেকো এরকম কোনো প্রকল্প দেখতে পাননি।
কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়াও গ্রামবাসীরা মিলিতভাবে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ জারি রেখেছে। স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বহুজাতিক কোম্পানির সকল কার্যক্রম জাম্বিয়া থেকে বন্ধ করার জন্যও জোর দাবি জানিয়ে আসছে তারা। এই নদীর পানি এসিড হয়ে যাওয়ার ঘটনা জাম্বিয়াতেই এই প্রথম নয়। এর আগে নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি নদীও ঠিক একই খনিজনিত কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
মন্তব্য চালু নেই