সৌরভ গাঙ্গুলির কলাম

এমন দক্ষিণ আফ্রিকাকে আর দেখিনি

ম্যাচ শুরুর আগে অনেকে অনেক কথা বলেছিল। কেউ বলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের মুখে উড়ে যাবে ভারতের ব্যাটিং। কেউ বলেছে লড়াইটা হবে ভারতীয় ব্যাটিং বনাম আফ্রিকান বোলিংয়ের। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই বলেছিলাম, ‘মন বলছে ভারতই জিতবে।’ আমার এই বলার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণটা হচ্ছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপ জয়ের যে টোটকা পেয়ে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল, তাতেই তারা অন্য প্রতিপক্ষগুলোর সামনে দুর্দমনীয় হয়ে উঠবে।

হলোও তাই। কোথায় লড়াই! প্রোটিয়ারা তো কোন ক্ষেত্রেই ধোনির দলের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। না ব্যাটিং, না বোলিং। সব ক্ষেত্রেই পরাজিত। ব্যাট হাতে ডেল স্টেইন-মরনে মর্কেলদের রীতিমত শাসন করেছে শিখর ধাওয়ান আর আজিঙ্কা রাহানে। ভারতীয় এই তরুণদের মনোভাবই অন্যরকম। এক কথায় বেপরোয়া। কাউকেই পরোয়া করতে জানে না তারা।

আর বোলিং! প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে শামিরা যেন সত্যিই স্টেইন-মর্কেলে পরিণত হয়েছিল। আসলেই ধোনির এই দলটির অনেক দুর যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ছন্দ ধরে রাখতে পারলে ফাইনাল খেলারও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর আমার তো বিশ্বাস অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কিভাবে পেস আক্রমণ সামলাতে হয়, সেটা শিখে গেছে কোহলি-ধাওয়ান-রাহানেরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষেই আত্মবিশ্বাসটা গড়ে নিয়েছে ধাওয়ান। ওইদিন ৭৩ রান করেছিল সে। তার ওই ইনিংসটা যদি হয় আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার ১৩৭ রানের ইনিংসটা অবশ্যই বিশ্বসেরা বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে সেই আত্মবিশ্বাসের বাস্তবায়ন।

অসাধারণ সেঞ্চুরির জন্য শিখর ধাওয়ানের প্রশংসা করতেই হবে। তবে বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানেদের কোনভাবেই ছোট করে দেখছি না। একই সঙ্গে সুরেষ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং রবিন্দ্র জাদেজাকেও সঠিকভাবে ফর্মে ফেরা প্রয়োজন।

একটা বিষয় আমার চোখে খুব ধরা পড়েছে। ব্যাটিংয়ে টিম ইন্ডিয়া কিন্তু পুরোপুরি কোহলি এবং রাহানে নির্ভর হয়ে পড়ছে। এটা কোনভাবেই ভালো লক্ষ্মণ নয়। এই দলটির মধ্যে আরও বেশি ভারসাম্য আনতে পারে মিডল অর্ডারের ফর্মে ফেরা। টুর্নামেন্টের যে কোন পর্যায়ে মিডল অর্ডারের কারণে ভুগতেও হতে পারে টিম ইন্ডিয়াকে। সুতরাং, এই অংশটিকে আরও শক্তিশালি করতে হবে। তাহলেই টুর্নামেন্ট শেষে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা যাবে।

এই ম্যাচটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কথা বলতে গেলে বলব, একটা বিষয় খুব অবাক লাগছে। এমন দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিন্তু কেউ ভাবতে পারেনি। কবে সর্বশেষ তাদেরকে এই চেহারায় দেখেছি মনে পড়ে না। আদৌ দেখেছি কি না তাও মনে করতে পারছি না। লড়াই হবে ভাবছিলাম। কিন্তু ম্যাচ শেষ পর্যন্ত এতটা এক তরফা হয়ে যাবে, কেউ ভাবতে পারেনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার এমন দুর্দশার কারণ, খুব দ্রুত হাশিম আমলা এবং এবি ডি ভিলিয়ার্সের উইকেট হারানো। একই সঙ্গে একটা বিষয় পরিস্কার, ওয়েন পার্নেল আর ভারনন ফিল্যান্ডারকে সাত-আটে দেখে মনে হয়েছে, তাদের ব্যাটিং গভীরতা খুব বেশি নয়। এ কারণেই তাদেরকে এত বেশি ভুগতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত।

তবে সবচেয়ে বড় কথা, এই বিজয়ের ফলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তারা যে বিশ্বকাপে জয় খরায় ভুগছিল, সেটা আপাতত কেটেছে। আর বিশ্বকাপের সামনের ম্যাচগুলোতে লড়াই করার জন্য অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেছে।



মন্তব্য চালু নেই