এবার বরিশালে দু’শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ
সিলেটে শিশু রাজনকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে যখন তোলপড়া চলছে ঠিক সে সময়েই বরিশালে ঘটেছে একই রকম ঘটনা। সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি শিশু সদনে বালিকা (উত্তর) অনাথ দুই শিশুকে নির্মম ভাবে পিটিয়েছে ওই সদনে কর্মরত কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়া।
শনিবার সকাল ১০টায় ওই ঘটনা ঘটলে এর ভিডিও চিত্র সোমবার সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে সবার। মঙ্গলবার বেলা ১টায় জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
মারধরের শিকার দুই শিশু হচ্ছে- বাবুগঞ্জ উপজেলার ভূতেরদিয়া গ্রামের বিউটি বেগমের কন্যা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ডালিয়া (১০) ও তাজকাঠি গ্রামের মোস. তাছলিমা বেগমর কন্যা আঁখি (৯)।
শিশু সদনের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ইসমত আরা খানম জানান, ১১ জুলাই সকাল ৯ টায় শিশু সদনে থাকা ডালিয়ার মা বিউটি বেগম মেয়ের সাথে দেখা করতে আসেন। চলে যাবার সময় ডালিয়া তার সাথে যেতে চায়। এরপর কাউকে না বলে চলে গেলে সদনের কম্পাউন্ডার মো. দুলাল ডালিয়কে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দেখতে পেয়ে সদনে ফিরে যেতে বলেন। এরপর সদনে এসে ডালিয়াকে না পেয়ে ডালিয়ার সাথে আঁখিকে সাগরদী বাজারে মোবাইল ফোনের দোকানে দেখতে পায়। এরপর তাদের দুজনকে ডেকে এনে দুলাল মিয়া ভয় দেখানোর জন্য শাসিয়েছেন বলে তিনি জেনেছেন।
এনিয়ে নির্যাতনের শিকার আঁখি তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী বলেন, সদনের সকল শিশুকে আগে থেকেই শাসানো হয়েছে ঘটনায় মুখ না খুলতে।
মঙ্গলবার সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর টনক নড়লে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় দুই শিশুকে ভীতসন্ত্রস্ত দেখায়।
জেলা প্রশাসক সংবাদকর্মীদের বলেন, শিশুদের বেড়ে ওঠায় সহযোগিতা করার দায়িত্ব রাষ্ট্র থেকে সবারই। নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ও এর সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধে আইন অনুায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, নির্যাতনকারী দুলাল কম্পাউন্ডার সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে সদন থেকে পালিয়ে যান। তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও মোবাইল রিসিভ করেননি।
দুই শিশুর মধ্যে একজনকে নির্যাতন করার সময় সে চিত্র মোবাইল ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে রাজন নামে এক শিশুকে চুরির অপবাদে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তার লাশ গুম করার চেষ্টাকালে জনতার সহায়তায় পুলিশের হাতে আটক হয় মুহিদ আলম।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় আটক মুহিদ আলম (২২) ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।
নিহত সামিউল আলম রাজনের বাড়ি সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদে আলী গ্রামে। সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন প্রাইভেটকারচালক। তার দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়।
ভিডিওটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ
মন্তব্য চালু নেই