এক নজরে মেয়র প্রার্থীদের হালচাল

জমে উঠেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে হেভিওয়েট উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীদের পাশাপাশি আটঘাট বেঁধে নেমেছেন মেট্রিক পাস, অর্ধশতাধিক মামলার আসামি ও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীও। তবে অতীতের নির্বাচনের তুলনায় এবার মেয়র পদে শিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে।

সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা এখন জনসংযোগে ব্যস্ত। পাশাপশি নিজ দল থেকে মনোনয়ন পেতে জোর লবিংও চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী অনিসুল হক ও দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে বিএনপিও তাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। দুই সিটিতে মেয়র পদে যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। কারো বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলাও রয়েছে।

গতকাল ২৯ মার্চ শেষ হয়েছে মনোনয়নপত্র দাখিল। আগামী ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ১ ও ২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৯ এপ্রিল প্রত্যাহারের শেষ দিন।

দুই সিটিতে মেয়র পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন জানা যাক তাদের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত:

আনিসুল হক
আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। সম্প্রতি আনিসুল হককে উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন  প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। এরপরই তিনি প্রচারণায় নেমে পড়েন। আনিসুল হক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর (এসসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি রাজশাহী ইউনির্ভাসিটি থেকে অর্থনীতিতে অর্নাস করেন। বোস্টন বেনটলি ইউনির্ভাসিটি থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিগ্রি লাভ করেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে  দাবি করেন তিনি।

আবদুল আউয়াল মিন্টু
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন কারাবন্দি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক এমএসসি ডিগ্রি অর্জনকারী আবদুল আউয়াল মিন্টু। ন্যাশনাল ব্যাংক লি. ও জেনারেল লাইফ ইন্সুরেন্সের ডাইরেক্টর তিনি। মাল্টিমোড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এক সময়ে আব্দুল আওয়াল মিন্টু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে বিএনপির সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

মির্জা আব্বাস
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক ঢাকা মির্জা আব্বাস। দক্ষিণ সিটি মেয়র পদে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন এবং বিএনপি সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রী হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন বিএ। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। তার মথ্যে ১২টি মামলা প্রত্যাহার, অব্যহতি এবং খালাস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে বর্তমানে তার আরো ২ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। মির্জা আব্বাস বর্তমানে আত্নগোপনে রয়েছেন।

সাঈদ খোকন
সাঈদ খোকন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। সাঈদ খোকন ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকার কাছে পরাজিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ৬টি রাজনৈতিক মামলা ছিল। ওইসব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি সাঈদ খোকনকে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই তিনি প্রচারণায় নেমে পড়েন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

গোলাম মাওলা রনি
নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত গোলাম মাওলা রনি এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও এখন তিনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারী হিসেবে পরিচিতি। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম সংসদে তাকে ওই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এলএলএম ডিগ্রিধারী রনির পেশা হচ্ছে  শিপিং এজেন্ট, সার্ভে আই, এসপি আমদানি ও রপ্তানি এবং গার্মেন্ট ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে নবম সংসদের সময় কোনো মামলা ছিল না। তবে পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এবার তিনি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন।

নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তবে তিনি বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। দণ্ডিতরা সাধারণত নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না বলে আইনজীবীদের অভিমত।

এম.কম ডিগ্রিধারী নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ১৮টি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে ৮টি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

ববি হাজ্জাজ
ববি হাজ্জাজ আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের জামাতা। ববি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়া তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করার পরদিন ওই পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানা গেছে।

আবদুল্লাহ আল ক্বাফী (কাফি রতন)
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাফি রতন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএসএস ও এমএসএস করেছেন। সাবেক ব্যাংককার হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২২ বছরের চাকুরীর অবসান ঘটিয়ে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক জীবন গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সহকারী সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দ্বিতীয় দফায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি সিপিবি তাকে উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়। রোববার তিনি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

মাহী বি চৌধুরী
মাহী বি চৌধুরী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী। তিনি বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব। সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে তিনি। মাহী বি চৌধুরী ২০০২ সালে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির এমপি হন। পরে বিএনপি ত্যাগ করে একই আসনে ২০০৪ সালের উপ নির্বাচনে বিকল্পধারা থেকে জয়ী হন। গত বুধবার তার পক্ষে মনোনয়পত্র সংগ্রহ করেন ফেসবুক ভিত্তিক ‘ব্লু ব্যান্ড কল’ সদস্যরা।  মাহী বি চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কী না জানা যায়নি।

মোহাম্মদ এখলাস উদ্দিন মোল্লা
মোহাম্মদ এখলাস উদ্দিন মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৫ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে এসএসসি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এখলাস উদ্দিন মোল্লা আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার ভাই ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী মোল্লা।

হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন
মিলন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য। একজন সফল রেকসিন, প্লাস্টিক ও চামড়া ব্যবসায়ী। ঢাকা রেকসিন প্লাস্টিক চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক ইমপোর্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই বলে দাবি করেন তিনি। সম্প্রতি তাকে দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় জাপা থেকে। এরপর থেকেই তিনি প্রচারণা শুরু করেন। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা জানাতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

সেলিম ভূঁইয়া
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এবং একে স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। গত ২৪  জানুয়ারি রাজধানীর একে স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব-পুলিশের একটি যৌথ ইউনিট। সেলিম ভূঁইয়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করেন।

মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা
বাংলাদেশ মেস সংঘের সহাসচিব ও গণমাধ্যম কর্মী আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেছেন তিনি। আগে ২০০২ সালে সিটি নির্বাচনে তৎকালীন ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই