একেই বলে বদলা! পুলিশ, দমকল, পাড়ার চারশো লোককে নাচিয়ে ছাড়ল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র
খবর যায় লিলুয়া থানায়, পুলিশের থেকে খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসে দমকলের দু’টি গাড়ি। তখন ঘড়িতে সন্ধে ছ’টা।
চার ঘণ্টা ধরে তুর্কি নাচন নাচল পুলিশ, দমকল-সহ চারশো লোক। যার নেপথ্যে ক্লাস এইটের এক ছাত্র।আর গোটা পর্বে ভিলেন হয়ে গেলেন বাবা!
হাওড়ার লিলুয়া থানার দাশপাড়ায় বাসিন্দা প্রিয়াংশু সিংহ। লিলুয়ার ভারতীয় হাইস্কুলের ক্লাস এইটের ছাত্র সে। টিউশন যাওয়ার নাম করে শনিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। সন্ধেবেলা বাড়ি ফেরে প্রিয়াংশু।
বাড়ি ফেরার পরেই ওই ছাত্রকে বকাবকি করে তার বাবা প্রমোদ সিংহ। বাবা ছেলেকে বলেন, সারাদিন বাইরে বাইরে ঘোরার শাস্তি হিসেবে সারারাত পড়াশোনা করতে হবে। সারাদিন স্নান না করায় বাড়ির কুঁয়োর জলে ছেলেকে স্নান করে এসে পড়তে বসতে বলেন প্রমোদবাবু।
এর পরেই শুরু চার ঘণ্টার টান টান নাটক। বাবার কথা মতো ছেলে বাড়ির কুঁয়োর জলে স্নান করতে যায়। কিছুক্ষণ সাড়াশব্দ না পাওয়ার পরে ঘরের ভিতর থেকে বাবা হঠাৎ শোনেন, কুঁয়োর মধ্যে ঝপাং করে কিছু একটা পড়ল। কী হল দেখতে ছুটে বাইরে আসেন বাবা। দেখেন কুঁয়োর ভিতরের জল নড়ছে, এদিকে ছেলে সেখানে নেই। স্বভাবতই প্রমোদবাবু ভাবেন অভিমান করে নির্ঘাত কুঁয়োর জলে ঝাঁপ দিয়েছে। নাহলে কোনওভাবে কুঁয়োর ভিতরে পড়ে গিয়েছে ছেলে।
আতঙ্কিত বাড়ির লোকের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। প্রথমে প্রমোদবাবু নিজেই কুঁয়োতে নামতে যান। কিন্তু জল বেশি থাকায় পারেননি। এর মধ্যেই খবর যায় লিলুয়া থানায়, পুলিশের থেকে খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসে দমকলের দু’টি গাড়ি। তখন ঘড়িতে সন্ধে ছ’টা। সার্চ লাইট লাগিয়ে দ্রুত কুঁয়োর জল বের করতে শুরু করেন দমকল কর্মীরা। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় কুঁয়োর সব জল বের করলেও ছাত্রের হদিশ পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোক, প্রতিবেশী, সবার চোখে তখন জল। চোখে, মুখে উদ্বেগ। ছাত্রের আত্মহত্যার খবর পেয়ে ততক্ষণে শ’চারেক লোক জমে গিয়েছে প্রমোদবাবুর বাড়িতে।
কুঁয়োর জল ছেঁচেও ছাত্রের খোঁজ না পাওয়ায় সন্দেহ হয় জলের নীচে পাঁকের মধ্যে আটকে থাকতে পারে দেহ। ছাত্রকে উদ্ধারে মরিয়া দমকল কর্মীরা পাঁক ঘাটতেও শুরু করেন। কিন্তু সেখানেও খোঁজ পাওয়া যায়নি প্রিয়াংশুর। তখনই আস্তে আস্তে অন্য সন্দেহ হয় দমকল কর্মী এবং পুলিশ আধিকারিকদের। এবার পাড়ার ভিতরেই শুরু হয় তল্লাশি। ইতিমধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ছাত্রের বাড়ি লাগোয়া গলির ভিতরের এক তস্য গলির অন্ধকারের মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় কীর্তিমান ছাত্রটির। তখনও ঘাড়ে স্নান করার গামছা, খালি গা!
ছেলেকে ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন প্রমোদবাবু এবং তাঁর পরিবার। স্বস্তির শ্বাস ফেলেন দমকল কর্মী, পুলিশ আধিকারিকরাও। যাক ছেলেটা তো বেঁচে আছে!
কিন্তু পুলিশ, দমকল, গোটা পাড়াকে এমন তুর্কি নাচন কেন নাচালো সে? একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরেই ওই ছাত্র জানায়, বাবার বকুনির প্রতিশোধ নিতেই এই পথ বেছেছিল সে!
ছেলেকে ফিরে সাময়িক স্বস্তি পেলেও ফের একপ্রস্ত বকাবকির জন্য তৈরি হচ্ছিলেন প্রমোদবাবু। এবার হয়তো মাথা গরম করে দু’-এক ঘা দিয়েও দিতেন। কিন্তু পুলিশ এবং দমকল কর্মীরাই তাঁকে নিরস্ত করেন। যদি সত্যিই মারাত্মক কিছু একটা করে বসে ছেলেটা। যার জন্য চার ঘণ্টার বৃথা পরিশ্রম, সেই প্রিয়াংশুকে উল্টে বোঝান দমকল এবং পুলিশকর্মীরা। ছেলেকে চোখে চোখে রাখার জন্য প্রমোদবাবুকে পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু বাবাকে ভয় দেখাতে কুঁয়োয় তাহলে কী ফেলেছিল সে? রহস্যভেদ করে প্রিয়াংশু জানিয়েছে, একটা আস্ত ইট কুঁয়োর জলে ফেলে দিয়েই অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়েছিল সে!-এবেলা
মন্তব্য চালু নেই