এই সেই ‘ভূতুড়ে’ গাছ যেটা একাই কেড়ে নিয়েছে ৭ টি মানুষের প্রাণ!
একটি মাত্র গাছ গত পাঁচ মাসে কেড়ে নিয়েছে সাতটি প্রাণ। আর সেই থেকে গাছটি ভুতুড়ে গাছ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এলাকায়। এই গাছের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ জীবিত ফিরতে পারেন না, কারো না কারো জীবন যাবেই। গত পাঁচ মাসে এমনটাই অভিজ্ঞতা হয়েছে এলাকাবাসীর।
অদ্ভুত এই গাছ রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুর্গাপুরের প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা সরণিতে। পাঁচ মাসে ঘটা সাতটি ঘটনার পর এখন এই গাছের কাছাকাছি আসার আগেই সাবধান হয়ে যান গাড়িচালকরা। তবুও প্রায় সময়ই শেষরক্ষা হয় না।
‘ভুতুড়ে’ এই গাছকে নিয়ে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে চলছে নানা গুঞ্জন। এই গাছ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন সবাই।
দুর্গাপুর একসময় শাল, পিয়াল, মহুয়া, সেগুনের জঙ্গলে ঘেরা ছিল। পরে দুর্গাপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার পর সেই জঙ্গল কেটে জনবসতি গড়ে ওঠে। পরিকল্পনা করে গড়ে তোলা হয় দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী। ইস্পাত নগরীকে দূষণমুক্ত রাখতে শহরের বড় বড় রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন ঘটানো হয়।
২১ নম্বর জাতীয় সড়কের গান্ধী মোড় এবং সিটি সেন্টার থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীতে আসতে অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা সরণি। এই সরণির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি শিরীষগাছ, যে গাছকে ঘিরেই আজ মৃত্যুভয় রীতিমতো জেঁকে বসেছে গোটা এলাকায়।
সম্প্রতি এই শিরীষগাছের সঙ্গে পরপর এক সপ্তাহে দুটি দুর্ঘটনায় নিহত হন দুজন। আহত হন আরো দুজন। এ ছাড়া গত পাঁচ মাসে এই গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারা গেছেন আরো ছয়জন। ফলে স্থানীয় জনগণ ছাড়াও পথচলতি গাড়িচালকদের কাছে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত এই শিরীষগাছ।
চলতি মাসের ১০ জুলাই সপরিবারে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা অশোক মুখোপাধ্যায়। এ সময় ওই গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর ছেলে অঙ্কুশ মুখোপাধ্যায় (৩০)। এ ঘটনার ঠিক পাঁচ দিন পরে ১৫ জুলাই ফের এই শিরীষগাছের সঙ্গে দুর্ঘটনায় মারা যান দুর্গাপুরের বেনাচিতির বাসিন্দা ব্যবসায়ী জয়ন্ত কর্মকার (৩২)।
কয়েক মাস আগে এই গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান এক আরোহী। এভাবে এই একটি মাত্র গাছের সঙ্গে দুর্ঘটনায় বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল।
স্বভাবতই শিল্পনগরী দুর্গাপুরবাসীর কাছে এই ভুতুড়ে গাছ এখন একমাত্র আতঙ্কের নাম। ঠিক কী কারণে এই শিরীষগাছটির সঙ্গেই সব দুর্ঘটনা ঘটছে, তা বুঝতে পারছেন না কেউই। ফলে শিরীষগাছটি সম্পর্কে ছড়াচ্ছে নানা জল্পনা।
কেউ কেউ বলছেন, টার্নিংয়ের সময় রাস্তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার কেউ বলছেন ভৌতিক ব্যাপার। কেউ কেউ বলছেন, গাছে বাসা বেঁধেছে অতৃপ্ত আত্মা। ফলে এই গাছ কেটে ফেলার দাবিও উঠেছে।
সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে থাকা এই শিরীষগাছের ভয়ে এখন এ এলাকায় গাড়িগুলো সর্বনিম্ন গতিতে যাতায়াত করছে। সাবধান হয়ে এই স্থানে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকরা। তার পরও এক শিরীষগাছের কারণেই প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুর্গাপুরের গাড়িচালকদের।
মন্তব্য চালু নেই