উত্তর কোরিয়ায় আচমকা হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

ঘোষণা দিয়ে নয়, উত্তর কোরিয়ায় আচমকা আঘাত হানার কথা ভাবতে শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো এমনটাই জানিয়েছে।

চীনের প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়া, তাই ট্রাম্প চান কিম জং উনের বেপরোয়া পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে আগে চীন পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। কিন্তু চীন পদক্ষেপ না নিলে আমেরিকা যে চুপচাপ বসে থাকবে না, তেমন বার্তাও দিতে শুরু করেছে ওয়াশিংটন।

আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল এইচআর ম্যাকমাস্টারকে সে বিষয়ে জরুরি নির্দেশও দিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
মার্কিন নৌসেনার প্যাসিফিক কম্যান্ড ইতিমধ্যেই কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপকে উত্তর কোরিয়ার দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। যে দিন থেকে মার্কিন নৌবহর যাত্রা শুরু করেছিল কোরীয় উপদ্বীপের দিকে, সেই দিন থেকেই সুর ক্রমশ চড়াতে শুরু করেছেন কিম জং উন।

মার্কিন নৌসেনার দিক থেকে কোনও রকম প্ররোচনা এলেই আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পরমাণু হামলা চালানো হবে— এমন হুঁশিয়ারিই দিয়েছে পিয়ংইয়ং। শনিবার পিয়ংইয়ং-এ এক বিরাট সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে কিম জং উন গোটা বিশ্বকে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রসম্ভার সম্পর্কে সচেতন করতে চেয়েছেন। তার পর দিন, অর্থাৎ রবিবার আরও এক ধাপ এগিয়ে কিম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার চেষ্টা করেছিলেন। সে চেষ্টা অবশ্য ব্যর্থ হয়েছে, উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষেপণাস্ত্রটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিম অবশ্য পিছু হঠতে নারাজ। উত্তর কোরিয়া ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার তোড়জোড় করছে এবং ষষ্ঠ পরমাণু বিস্ফোরণটিও ঘটাতে চলেছে, দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার।

যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে সে নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মাধ্যমে তিনি বার্তা দিয়ে দিয়েছেন— উত্তর কোরিয়া আর কোনও প্ররোচনামূলক আচরণ করলে আমেরিকা কঠোর পদক্ষেপ করতে কোনও দ্বিধা করবে না। সেই কঠোর পদক্ষেপ যে আচমকা হামলা, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কারণ সম্প্রতি সিরিয়াতেও আচমকাই ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রেও যে তেমন পদক্ষেপ হতে পারে, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রক সে কথাও এ বার আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে শুরু করেছে।

রবিবার উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর, পিয়ংইয়ং-এর আচরণকে ‘প্ররোচনামূলক এবং স্থিতিশীলতা ধ্বংসকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল ম্যাকমাস্টার। উত্তর কোরিয়ার আচরণ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাকমাস্টার জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গোয়েন্দা বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।

উত্তর কোরিয়া রবিবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ম্যাকমাস্টার অত্যন্ত কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকা আঘাত হানতেই বেশি পছন্দ করেন— এই কথার উপরেই জোর দিয়েছিলেন ম্যাকমাস্টার। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ায় যে কোনও মুহূর্তে যে আছড়ে পড়তে পারে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা, সে ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট করেই দিয়ে দিয়েছেন ম্যাকমাস্টার।

মার্কিন প্রশাসন অবশ্য বার বার এ-ও জানাচ্ছে যে, চীনের উচিত উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাগ্রে পদক্ষেপ করা। দেশটির শাসক কিম জং উনের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা এবং অত্যাচারের অনেক অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নিজের দাদাকেও কিম খুন করিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ হেন শাসকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ করা যে বৃহৎ শক্তিগুলির কর্তব্য, সে কথা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে আমেরিকা।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা



মন্তব্য চালু নেই