ঈদের নামাজে পুলিশের সাথে পাহারা দিয়েছেন ৬০ জন হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে হবিগঞ্জে ঈদের জামাতের পাহারায় ছিলেন ৬০ জন হিন্দু ধর্মালম্বী স্বেচ্ছাসেবক।
সকালের বৃষ্টি উপেক্ষা করে হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কেন্দ্রীয় ঈদগাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সনাতন ধর্মের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর হবিগঞ্জ। কেউ যাতে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটতে পারে এবং নির্ভয়ে যেন মুসলমানরা নামাজ পড়তে পারেন এ জন্যই তাদের এই দায়িত্ব পালন।
৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ঈদগাহের সামনে শায়েস্তানগর পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করেন। আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিলেন ওই ৬০ জনের স্বেচ্ছাসেবক দলে।
‘পূজা উদযাপনের জন্যও কোনোদিন সকালে ঘুম থেকে উঠিনি। কিন্তু আজ সকাল সাড়ে ৬টায় হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতে সবার সঙ্গে মিলিত হয়েছি। কাজটা করে অসম্ভব একটা প্রশান্তি পেয়েছি মনে। আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা যেন কোনো আতঙ্ক আর ভয় ছাড়া তাদের নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’
কথাগুলো বলেন স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনরত পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তুষার মোদক।
পূজা উদযাপন পরিষদের বিভাগীয় সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি অটুট থাকার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা তাদের নামাজ আদায় করতে পেরেছেন এজন্য খুব ভালো লাগছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একই শহরে বাস করি। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হিন্দু মুসলিম সবার সঙ্গে কাজ করতে হয়। শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে তো আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়াতে পারব না। আজকে যা করেছি সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে হবিগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা নতুন অধ্যায় তৈরি করতে পেরেছি এই জন্য ভালো লাগছে।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উদ্যোগটি নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জহির।
তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সবাই সমর্থন করেছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত রোববার হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকদেরকে নিয়ে সোমবার বিকেলে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।
হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহে যাতে কেউ সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সনাতন হিন্দু ধর্মের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র সফলভাবে ওই দায়িত্ব পালন করায় তাদের ধন্যবাদ জানান।
মন্তব্য চালু নেই