ইরাকের তেল লুটের আশা ট্রাম্পের

ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন চালিয়ে তাদের তেলসম্পদ কেন লুট করে আনা হয়নি- এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে আরেকবার সুযোগ নিতে হবে। ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লংঘন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে নতুন করে ইরাক যুদ্ধের আশংকাও তৈরি হয়েছে। খবর হাফিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের।

শনিবার ট্রাম্প মনোনীত সিআইএ প্রধান মাইক পম্পেওকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি এখন অর্থনৈতিক বিষয়ের কথা বলি। আমরা ইরাক যুদ্ধ চালিয়েছি। তবে তাদের তেল কেন লুট করে আনিনি? তেলসম্পদ আমাদের কাছে রাখা উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, মাইক, আপনি যদি এ বিষয়ে ভাবেন, তাহলে বুঝতে পারবেন কেন আমাদের তেল চুরি করা উচিত ছিল। এখন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অর্থের প্রধান উৎস এই তেল। এ কারণে তেল আমাদের নিয়ে আসা দরকার। যাই হোক। হয়তো এ বিষয়ে আমাদের আরেকবার সুযোগ নিতে হবে।

ন্যাশনাল রিভিউ পত্রিকা জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১১ সালেই ইরাকের তেল লুট করে আনার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ইরাকের তেলসম্পদ নিজেদের করে নেবেন। গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটা কেড়ে নেয়া নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ব্যয়ের পরিবর্তে অর্জন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গেলাম। খরচ করলাম তিন ট্রিলিয়ন ডলার। হারালাম হাজার হাজার জীবন আর এরপর কী ঘটবে আমরা কিছু না পেলে। আপনারা জানেন, জয়ী হওয়া মানে প্রতিপক্ষকে সর্বস্বান্ত করে দেয়া।’

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইরাকের তেল দখল নিয়ে ট্রাম্প নতুন করে বক্তব্য রাখলেন। তবে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকবার সুযোগ নিতে হবে’ বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে নতুন করে যুদ্ধের আশংকা দেখা দিয়েছে। ক্যামেরন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইতিহাসবেত্তা ল্যান্স জান্ডা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। একজন প্রেসিডেন্ট এভাবে কথা বলতে পারেন না।’ ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশন ‘ল’স অ্যান্ড কাস্টমস অব ওয়ার’, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনের ‘প্রটেকশন অব সিভিলিয়ান পার্সনস ইন টাইম অব ওয়ার’, ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘ রেজ্যুলেশনের স্পষ্ট লংঘন। আন্তর্জাতিক বিষয় ও কৌশল বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি কোর্ডসম্যান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আপনি নাগরিকের সম্পদ নিজের আয়ত্তে আনতে পারেন না। আর এটা হলে তা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তেল রফতানি করাই ইরাকের একমাত্র উপার্জনের উপায়। খরচ করতে হবে আরও অর্থ, সেনাবাহিনী রাখতে হবে, তৈরি করতে হবে ঘৃণার পরিবেশ, যা আগেও করা হয়েছিল। এটা হবে নব্য-উপনিবেশের সবচেয়ে বাজে ধরন। কাজটা ব্রিটেনও করেনি।’ ‘আ ডিক্লারেশন অব অ্যানার্জি ইনডিপেনডেন্স’ বইয়ের লেখক জে হেকস মনে করেন, ট্রাম্পের এ নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেবল শত্রুসংখ্যাই বাড়াবে। তিনি বলেন, ‘ইরাকের তেলে হাত দেয়া কেবল নতুন শত্রুই বাড়াবে।’ মধ্যপ্রাচ্যে সেনা ব্যয় কমানোর পরামর্শও দেন তিনি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে : ব্যবসায় বিদেশী সরকারের অর্থ নেয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হতে যাচ্ছে। সোমবার নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটানে ফেডারেল কোর্টে এ মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন একদল আইনজীবী। তাদের মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের নৈতিক দফতরের কয়েকজন সাবেক অ্যাটর্নি রয়েছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

আইনজীবীদের দাবি, ট্রাম্প তার ব্যবসায় বিদেশী অর্থ গ্রহণ করে সংবিধান লংঘন করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দীপক গুপ্ত জানিয়েছেন, মামলটি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার ব্যবসায় সংবিধান পরিপন্থী অর্থ গ্রহণের অভিযোগে গৃহীত হতে পারে। আইনজীবীরা আদালতের কাছে এ ধরনের অর্থ গ্রহণ না করতে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আদেশ চাইবেন। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য নেয়ার জন্য ট্রাম্পের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ট্রাম্পের ছেলে ও ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের উপ-প্রধান নির্বাহী এরিক ট্রাম্প জানিয়েছেন, যে কোনো আইনি ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই প্রস্তুতি নিয়েছে তার কোম্পানি।



মন্তব্য চালু নেই