ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সামরিক পরিকল্পনা ট্রাম্পের, পারমাণবিক প্রকল্প বিস্তারের হুঙ্কার

‘আত্মরক্ষার স্বার্থ রক্ষা’র অজুহাতে সামরিকতার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি না করার নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরে এসেছেন সদ্য দায়িত্ব নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অতীতের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতায় সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছন তিনি। শুক্রবার কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি)বড় আকারের ‘সামরিকবান্ধব’ বাজেট পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া বৃহস্পতিবারের এক সাক্ষাৎকারে পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা বাড়ানোর সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ডিসেম্বরের এক টুইটার পোস্টেও তিনি একই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। আগামী মঙ্গলবার জাতীর উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দেবেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, সেই ভাষণকে সামনে রেখেই সামরিক ও পারমাণবিক ইস্যুতে নিজের ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরেন মার্কিন ইতিহাসের সবথেকে বিতর্কিত এই প্রেসিডেন্ট।

শুক্রবার কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) সামরিকবান্ধব বাজেট পরিকল্পনার একটা আভাস দিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি হোয়াইট হাউজের সমালোচিত ‘মার্কিন নীতি’র পক্ষেও সাফাই গেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, কনজারভেটিভ রাজনীতিতে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এই সংগঠনটিই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, সিপিএসি-র সম্মেলনে ট্রাম্প ‘মার্কিন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সামরিক প্রতিষ্ঠা’র আভাস দিয়েছেন। ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ না করেই, তথা বাজেটে অন্য খাতের বরাদ্দ না কমিয়েই তিনি সামরিক বাজেট বিস্তৃত করার কথা জানিয়েছেন। তবে কীভাবে সেটা সম্ভব হবে, তার কোনও স্পষ্ট রূপরেখা দেননি ট্রাম্প। মঙ্গলবারের ভাষণকে সামনে রেখে সিপিএসি কনফারেন্সে ট্রাম্প জানান, আক্রমণ এবং আত্মরক্ষা- এই দুই ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর সামর্থ বাড়াতে বাজেট বৃদ্ধির জন্য তিনি কংগ্রেসে আহ্বান জানাবেন। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন সামরিক খাতকে আগের চেয়ে বড়, দক্ষ ও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘আশা করছি, এই ক্ষমতা আমাদের প্রয়োগ করতে হবে না। তবে সামরিক খাতে এটা হবে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের বিনিয়োগ।’ কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সীমান্তপ্রাচীর তৈরির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র শন স্পাইসার জানিয়েছেন, এ বছরের জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বাজেট হবে খুবই স্বচ্ছ; কীভাবে সামরিক তহবিল থেকে অতিরিক্ত ব্যয় হবে তারও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া থাকবে বাজেট।

এদিকে রয়টার্সকে দেওয়া বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ করার আভাস দেন ট্রাম্প। ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব দেখতে চান। তবে এই দাবির সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন, ‘…তবে পারমাণবিক শক্তির প্রশ্নে আমরা কোনো দেশের থেকেই পিছিয়ে থাকতে রাজি নই, এমনকি তা কোনো বন্ধুপ্রতিম দেশ হলেও।’ গত বছরের ডিসেম্বরে দেওয়া এক টুইটার পোস্টেও ট্রাম্প বলেছিলেন, গোটা বিশ্বে পারমাণবিক প্রকল্পের প্রশ্নে উপলব্ধি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভার শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী সংগঠন প্লাওশেয়ার্স ফান্ডের তথ্য বলছে, রাশিয়ার হাতে ৭ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ৬ হাজার ৮০০টি। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, স্থলভিত্তিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্তার ঘটিয়ে রাশিয়া ১৯৮৭ সালের মার্কিন-রুশ চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করা এ সমস্যা সমাধানের অনেক উপায়ের একটি। তবে চীন চাইলেই খুব সহজে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই