আসামে ২৪ বছরের ভয়াবহতম বন্যা

ভারতের আসাম রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় ১৯ লাখের মতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। রাজ্যের আবহাওয়া দপ্তরের বরাত দিয়ে গত ২৪ বছরের মধ্যে চলতি বছরের বন্যাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে ব্যাখ্যা করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

আবহাওয়া দপ্তরের খবর অনুযায়ী, পাহাড় অঞ্চলে ক্রমাগত বৃষ্টির কারণে ক্রমশ অবনতি ঘটছে বন্যা পরিস্থিতির। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আসামের ১৯টিরও বেশি জেলা। যার মধ্যে আসাম রাজ্যের বঙ্গাইগাঁও, লখিমপুর, ধেমাজি, জোরহাট, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, বরপেটা, মেরিগাঁও, দারাং ও শোনিতপুর অঞ্চলের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। এই জেলার প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি জায়গা পানির নিচে ডুবে রয়েছে।

রাজ্যের কোকরাঝাড়, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, তিনসুকিয়া, নলবাড়ী, বাকসা, বিশ্বনাথসহ কামরূপ অঞ্চল ভয়াবহ বিপর্যস্ত। ভেঙে পড়েছে এই জেলার যোগাযোগব্যবস্থা। এ ছাড়া আসামের রাস্তাঘাট, বাঁধ ও সেতুগুলো ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আসামের গুয়াহাটিতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। নদীর পানি দুই কুল ছাপিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে হু হু করে ঢুকে পড়েছে। পানির তোড়ে একের পর এক ঘরছাড়া হতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।

আসামের বিভিন্ন নদীর পানিতে ভেসে গিয়েছে অরুণাচল এবং ভুটান সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে আসামের ধুবড়ি এবং চিরাং জেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ স্যান্যাল। এ ছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও আজ বিমানে করে বন্যা পরিস্থিতি দেখেন। এরপর তিনি আসামের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা নিয়ে একটি বৈঠক করেন।

বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে এরই মধ্যে নেমে পড়েছে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী। চলছে বন্যাকবলিত লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ।

আসামের বিখ্যাত অভয়ারণ্য কাজিরাঙ্গার প্রায় ৯০ শতাংশ অংশ পানির তলায় ডুবে রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে কাজিরাঙ্গা অভয়ারণ্য থেকে বন্য প্রাণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। বনকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বন্য প্রাণীদের উদ্ধারে।

ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে এরই মধ্যে ডুবে গেছে রাজ্যের দুই হাজার ১৩ হেক্টর কৃষিজমি। বিস্তীর্ণ মাঠের ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।

বন্যদুর্গত এলাকায় এর মধ্যেই ৭০৩টি ত্রাণশিবির ও পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে প্রায় আড়াই লাখের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্যার জেরে রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ জন্য আসাম সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই