আতশবাজি পুড়িয়ে আর ফানুস উড়িয়ে উৎসবে মেতেছে বিশ্ব
শুভ নববর্ষ। আজ রবিবার (১ জানুয়ারি) ২০১৭ সালের প্রথম দিন। রাত ১২টা ১ মিনিটে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। আতশবাজি পুড়িয়ে আর ফানুস উড়িয়ে উৎসবে মেতেছে তারা। বিশ্বের দেশে দেশে আকাশজুড়ে দেখা গেছে আতশবাজির ভেলকি।
নববর্ষ মানেই নতুন স্বপ্ন। ছোট-বড় সবার কাছে নতুন দিনের প্রেরণা, নতুনভাবে জেগে ওঠার তাগিদ, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই করার স্বপ্ন। বাংলাদেশে ইংরেজি নতুন বছর মানেই শীতের কুয়াশা ভেদ করে আসা নতুন সূর্যকে বরণ করে নেয়া। উঠোনে বসে নরম রোদকে সঙ্গী করে পিঠা উৎসবে মেতে ওঠা। নতুন বছর মানেই ঘরভর্তি নতুন বইয়ের গন্ধ। নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ। নতুন বইয়ের মলাট বাঁধার আনন্দ। আর নতুন করে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখা, এবার ভালো করবই।
জননিরাপত্তার স্বার্থে এবার রাজধানীতে নববর্ষকে স্বাগতে জানাতে সব ধরনের আচার-অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। তবে রোগবালাই, বন্যা-খরা, ভূমিকম্প, তুষারপাত, শরণার্থী সংকট, জঙ্গি হামলার শঙ্কা সব কিছু ভুলে বছরকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ।
নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার, লন্ডনের বিগ বেন, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, রোমের কলোসিয়াম, মাদ্রিদের পুয়ের্তা দেল সল অথবা বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের কাছে বিজয়োল্লাসে নববর্ষকে স্বাগত জানাতে সমবেত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সিডনির হার্বার ব্রিজে উপচে পড়েছে ভিড়। ব্যাংককে ‘কাউন্টডাউন’ হয়েছে শহরের একেবারে মাঝখানে, হংকংয়ে বন্দরের অদূরে আর জাপানে নতুন বছরে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন শিন্টো ধর্মীয় তীর্থস্থানে। সর্বোত্রই বয়ে গেছে সেই আলোর ঝর্ণাধারা, চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আগামীর স্বপ্ন।
নতুন বছরের প্রত্যাশা বিষয়ে প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজরূপান্তর অধ্যয়নকেন্দ্রের সভাপতি, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশার তালিকাটি দীর্ঘ না করলেও চলবে, কয়েকটি ক্ষেত্রে যদি কাজ হয় তা হলেই যথেষ্ট মনে করব। এগুলো হচ্ছে বৈষম্য কমানো ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি; সেই সঙ্গে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা উৎসাহিত করা। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, দেশের বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের ভূমিকা পালন করছেন না। বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা হচ্ছে তেমন মানুষ, যারা কি ঘটছে সেটা বুঝতে পারেন এবং ব্যবস্থাটাকে বদলাতে চান। সমস্যা বোঝেন না এবং বুঝলেও ব্যবস্থাকে মেনে নেন এমন মানুষ বুদ্ধিজীবী নন; তা তারা যতই পণ্ডিত, জ্ঞানী, দক্ষ ইত্যাদি হোন না কেন। প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। বুদ্ধিমান মানুষদের অধিকাংশই এখন সুবিধাভোগী ও সুবিধালোলুপ। কোলাবরেটর কথাটা একাত্তরে বেশ শোনা যেত। সেটা ছিল খুবই ঘৃণার্হ পরিচয়; এখন যে তা প্রশংসাযোগ্য হয়েছে তা নয়। তখন কেউ কেউ সহযোগিতা করেছে হানাদারদের সঙ্গে, এখন সহযোগিতা চলছে বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে। এটা যারা করছেন তারা ভালো কাজ করছেন না, শতকরা ৮০ জনের বিপক্ষেই তাদের অবস্থান।
তিনি আরো বলেন, তবে হতাশার কারণ নেই। যুদ্ধটা বাঁচা-মরার, এ যুদ্ধে হতাশার স্থান নেই, যেমন স্থান নেই পরাজয়ের। ব্যক্তিগতভাবে বাচার যুদ্ধ ও স্বপ্ন সমষ্টিগত বাচার সংগ্রাম ও স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত। সেই যোগটা আগামী বছর আরো নিবিড় হবে- এটাই আশা করব। কারো একার নয়, এটি আমাদের সবারই আশা।
মন্তব্য চালু নেই