আজ একজন মানবিক ও সৎ তরুন পুলিশ অফিসারের গল্প আপনাদের শোনাব
আজ ব্যতিক্রমী একটা ঘটনার কথা বলবো ৷ গত শুক্রবার মুগদা৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রাত্রিকালীন ডিউটি চলছে আমার ৷ জরুরী বিভাগে একের পর এক রোগী দেখতে দেখতে রাত তিনটার দিকে রেস্টরূমে শুতে আসলাম ৷ সত্যি বলতে কী, সেদিন আসলে বেশীই টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম ৷ কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, নিজেও বুঝতে পারিনি ৷
কতক্ষন পরে আবারো দরজায় ঠক ঠক ৷ নতুন রোগী এসেছে ৷ দেখলাম, এস,আই আবেদ নামে তরুণ এক পুলিশ অফিসার এক রোগী নিয়ে এসেছে যার সর্বাংগ সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত, মাথায় প্রচন্ড হেড ইনজুরি ৷ সারা শরীর রক্তাক্ত, মুখমন্ডল -চোখ ফুলে ফেঁপে একাকার ৷ পুলিশ অফিসারটি ব্যস্ত হয়ে বললো, স্যার এ এক দরিদ্র রিক্শাওয়ালা, গভীর রাতের ফাঁকা রাস্তায় বেসামাল গতিতে ছুটে চলা এক ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে ৷ কর্তব্যরত টহল পুলিশ হিসেবে আমি তাকে এ হাসপাতলে নিয়ে এসেছি ৷’মনে মনে ভাবলাম, এ আর এমন কি, এটা তো স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন মাত্র ৷ ততক্ষণে আমার নির্দেশ পেয়ে কর্তব্যরত নার্স, ব্রাদাররা ইমারজেন্সি লাইফ সেভিং মেজার হিসেবে স্যালাইন পুশ ও অন্যান্য পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছে ৷
আবেগকে বললাম, দ্রুত রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যাজুয়াল্টি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে, বাকী ম্যানেজমেন্ট ওখানে হবে ৷ একমুহূর্তও কালক্ষেপণ না করে আবেদ তার সহযোগী অন্য পুলিশের সহায়তায় রোগীকে তাদের টহল গাড়ীতে নিয়ে ঢামেক এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল, যাওয়ার সময় ধন্যবাদ জানাতেও ভুললো না ৷
এ পর্যন্ত ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ৷ আমাদের কর্মজীবনে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় ৷ আজও ডিউটি চলাকালীন আবারও আবেদের সাথে দেখা,এবার অন্য আরেক রোগী নিয়ে এসেছে ৷ কথাপ্রসঙ্গে সেদিনের সেই রোগীটার কথা জিজ্ঞেস করতেই দেখলাম, পরিতৃপ্তির এক স্বর্গীয় আলো যেন ফুটে উঠলো ওর চোখে মুখে ৷বললো,’স্যার ,আল্লাহর রহমতে রোগীটি বেঁচে গেছে এবং এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ আছে ৷”
ওর সাথের পুলিশ কনস্টেবলটির কাছে পরে শুনলাম, সেদিন আবেদ নামের এই সৎ, দায়িত্বপরায়ণ তরুণ পুলিশ অফিসারের মাঝে যেন দেবদূত নেমে এসেছিল৷ ইমার্জেন্সি রক্ত প্রয়োজন হওয়ায় অনন্যোপায় হয়ে নিজে রক্তদান থেকে শুরু করে রোগীর জরুরি অষুধপত্রের খরচও সেই যোগান দিয়েছিল ৷
কনস্টেবলটি এ ঘটনাগুলো বলার সময় আবেদ মোবাইলে কথা বলছিল অন্য কারো সাথে ৷ আমি অবাক বিস্ময়ে তাকাতেই লাজুক সুরে বললো, একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সে যা করেছে, তা আশ্চর্য কিছুই নয়, বরং এর চেয়েও অনেক বেশী কিছু করতে সে মানসিকভাবে সবসময় প্রস্তত আছে ৷
সারাজীবন পুলিশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি দেখে ও জেনে বেড়ে উঠা আমার সীমিত জ্ঞান যেন প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেলো ৷ মানুষের প্রয়োজনে কোথাও না কোথাও ঈশ্বর স্বয়ং বুঝি অপর এক মানুষের শরীরে ভর করে নেমে আসেন মর্ত্যের পৃথিবীতে ৷
[ একজন ডাক্তারের ফেসবুক থেকে পাওয়া – http://goo.gl/ut8AOm ]
মন্তব্য চালু নেই