আগৈলঝাড়ার শুটকী পল্লীর ব্যবসায়ীরা হতাশ
কল্যাণ কুমার চন্দ, বরিশাল থেকে : স্বাদু পানির দেশী প্রজাতির মৎস্য অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ভরা মৌসুমেও শুটকী পল্লীর জেলেদের মুখে হাসি নেই। ভরা মৌসুম সত্বেও মাছের আকালের কারণে হতাশায় ভুগছেন এলাকার শুটকী পল্লীর সাথে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবি পরিবারগুলো। উপজেলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী রাজাপুর গ্রামের শুটকী ব্যবসায়ী অবনী রায় জানান, এ অঞ্চলের শতাধিক পরিবার শুটকী মাছের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন। বিশেষ করে এক পাশে নদী অববাহিকা এলাকা অন্য পাশে কোটালীপাড়ার বিল এলাকার মধ্যবর্তী উপজেলার পয়সারহাট-ত্রিমুখী-রাজাপুর গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শুটকি পল্লী। এ অঞ্চলের সু-স্বাদু মিঠা পানির নানা প্রজাতির শুটকী মাছ দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চল ও ভারতের আগরতলা পর্যন্ত এখানকার মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আগের তুলনায় পুটি, দেশী সরপুটি, পাবদা, কৈ, শোল, রয়না, খলশা, মাছসহ দেশী প্রজাতীর অনেক মাছ এখন আর,তেমন পাওয়া যায়না। শুটকী পল্লীর সাথে জড়িত পরিবারগুলো অধিক লাভের আশায় বছরের আশ্বিন মাসের প্রথম থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ছয় মাস শুটকীর কাজে নিয়োজিত থাকেন। তারা মাছ ক্রয় করে তার আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য মজুদ রাখেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাহিদা রয়েছে সিধঁল শুটকীর। যার প্রধান ক্রেতা ঢাকা ও চট্রগাম। সৌখিন ক্রেতারা এই শুটকী পল্লী থেকেও তাদের চাহিদানুযায়ি শুটকী ক্রয় করে থাকেন। দেশী-বিদেশী পাইকাররা এসে এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়। আবার ঢাকার কাওরান বাজার মোকামে গিয়েও মাছ বিক্রি করা হয়। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই মহা নের কাছ থেকে দাদন ও স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছের ব্যবসা করলেও মৌসুমের শেষ পর্যায়ে গিয়ে ওই দাদন ও ঋণের টাকা পরিশোধ করে তাদের হাতে আর তেমন কোন সম্বল থাকেনা। মৌসুম শেষে তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশা। স্থানীয়রা জানান, একযুগ আগে ভৌগলিক পরিবেশের অনুকুলে বানিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা পয়সারহাট-রাজাপুর-ত্রিমূখী-শুটকী পল্লীতে দেশী প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার মাছের মধ্যে পুঁঠি, শৌল, টেংরা, খলশা, পাবদা, কৈ, শিং, মাগুর, মেনি, ফলি, বজুরী, বাইন মাছ অন্যতম। এ শুটকী পল্লীতে দেশী প্রজাতির মাছগুলো কেটে, পানিতে পরিস্কার করে প্রাকৃতিক নিয়মে রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য মজুদ করা হয়। এখানে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত কোন রাসায়নিক দ্রব্য মাছে মেশানো হয়না। অবনী রায় আরো জানান, চাহিদার মধ্যে ক্রেতাদের প্রধান আকর্ষণ থাকে পুটি মাছের ওপর। প্রতি মন পুঠি মাছ তাদের ক্রয় করতে হচ্ছে চার থেকে ছয় হাজার টাকা দরে। প্রতি মন বাইন মাছের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, বুজরী চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অপর ব্যবসায়ী মনমথ রায়, অশোক রায়, জয়নাল চৌকিদার, মঙ্গল অধিকারী, নরেশ তালুকদার বলেন, বাজার থেকে একমন কাঁচা মাছ ক্রয় করে শুকালে ১৫-২০ কেজি শুটকি মাছ পাওয়া যায়। গড়ে প্রায় তিন মন কাঁচা মাছ শুকালে এক মন শুটকি মাছ পাওয়া যায়। একমন শুটকি পুঁটি মাছ সাত থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ওই পল্লীর মাছ কাটার কাজে নিয়োজিত রাজাপুর গ্রামের সন্ধ্যা অধিকারী, আয়না বেগম, পপি অধিকারী, শোভা রানী জানান, বছরে ছয় মাস মাছ কাটার সাথে নিয়োজিত থাকলেও বাকি ছয়মাস কাটে তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে। তারা বলেন, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। মাছ কেটে যা আয় করি তা দিয়ে বহুকষ্ঠে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বর্তমানে শুকনা মৌসুমের শুরুতে মাছ বেশী পাওয়া গেলেও কার্তিক মাসের পর বিলে মাছ কম থাকায় তাদের দুঃখ দুর্দশা আরো বেড়ে যায়। শুকটি পল্লীর ব্যবসায়ী রাজাপুরের অবনী রায় বলেন, সরকারীভাবে সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ায় প্রতি বছরই তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পরছেন। তাই শুটকি পল্লীর সাথে জড়িত মৎস্যজীবীরা সরকারের সংশ্লি¬স্ট বিভাগের কাছে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই