আগৈলঝাড়ার খাজুরিয়া গ্রামবাসী ওসির সোর্সের কাছে জিম্মি

বরিশাল জেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত খাজুরিয়া গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা থানার ওসির সোর্স পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারকারী সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মাওলার কাছে দীর্ঘদিন থেকে জিম্মি হয়ে পরেছেন। তার অপর্কমের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, ওই গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১০ অসহায় নারীকে জিম্মি করে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে ওসি’র কথিত সোর্স গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে। তার ভয়ে কেউ থানায় মামলা দায়ের করতে পারেননি। অতিসম্প্রতি তার এসব অপর্কমের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে গোলাম মাওলাকে সমাজচ্যুত (একঘোরে) করে রাখা হয়।

ভূক্তভোগী গ্রামবাসীদের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ওসির কথিত সোর্স পরিচয়দানকারী গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, দখল, লুটপাট ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব বরাবরে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, ওইগ্রামের আবুল হোসেন মিয়ার পুত্র এক সময়ের ট্রলার চালক থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম মাওলার আপত্তিকর সব কর্মকান্ডের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সূত্রমতে, কয়েক বছর পূর্বে পয়সারহাট নদীতে ট্রলার চালক হিসেবে মাওলার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার। একপর্যায়ে ওইসব নেতাদের ম্যানেজ করে গোলাম মাওলা ইউনিয়ন আ’লীগের সহসভাপতির পদটি দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ওইসব নেতাদের হাত ধরেই সে (মাওলা) ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলো। স্থানীয় রহিম মিয়ার পুত্র সুমন মিয়া অভিযোগ করেন, অতিসম্প্রতি তার চাষ করা পুকুরের লক্ষাধিক টাকার মাছ প্রকাশ্য দিবালোকে লুট করে নিয়ে গেছে মাওলা ও তার লোকজনে।

একই গ্রামের শাখাওয়াত হোসেন, জহিরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, থানার ওসিকে ম্যানেজ করে মাওলা তার সহযোগীদের নিয়ে স্থানীয় হাসেম মিয়ার পুত্র মজিবর রহমানের বাড়ি দখল করেছে। এছাড়াও পয়সারহাট নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে সে পাঁকা ভবন নির্মান কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এনিয়ে উপজেলা সমন্বয় পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ প্রদান করেন। একই সাথে ১১৪ ধারা জারি করে ওই জমিতে লাল নিশান টানিয়ে দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনার কয়েকদিন পরেই থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে পুর্ণরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন মাওলা। এছাড়াও তার (মাওলা) বিরুদ্ধে এলাকায় নিরিহ জনসাধারনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়সহ সরকারের ৪০ দিনের কর্মসূচী প্রকল্পের তিনজন শ্রমিক সর্দারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, গোলাম মাওলার সহযোগী হিসেবে রয়েছে একই গ্রামের হাবিবুর রহমান, হারুন-অর রশিদ, লতিফ বখতিয়ার, এসকেন্দার বখতিয়ার ও আল-আমীন। মাওলার যেকোন কাজে কেউ প্রতিবাদ করলে এসব লোকদিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা। এলাকাবাসী গোলাম মাওলার হাত থেকে রক্ষা পেতে জেলা পুলিশ সুপার ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম মাওলার বড় ভাই আব্দুুর রশিদ মিয়া বলেন, মাওলার খারাপ কাজগুলো পরিহারের জন্য তাকে সতর্ক করা হয়েছে। ৩নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, মাওলার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসংখ্য নারীকে জিম্মি করে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, মাওলার লোভের কারণে আর যেন কোনো অপরাধ না হয়, তার ব্যবস্থা তিনি ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহণ করবেন।

অভিযুক্ত ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মাওলা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এলাকার কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও তিনি নদী দখল ও থানার ওসির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করলেও অন্যান্য অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গোলাম মাওলা নামে আমার কোন সোর্স নেই। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ ফায়দা নিতে পারে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই