অসঙ্গতি ধরা পড়ছে রিজওয়ানার স্বামীর বক্তব্যে !

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকর বক্তব্যে অপহরণের ঘটনার যে বর্ণনা দেন তাতে অসংগতি ধরা পড়ছে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম।

আবু বকর সিদ্দিকের বর্ণনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে যখন মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় নিয়ে আসা হয়, তখন সময় লেগেছে মাত্র এক ঘণ্টা। পথে কোনো ফেরি পড়েনি। সেই পথে কিছু রাস্তা ছিল ভাঙাচোরা।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ঢাকার উপকণ্ঠে ফেরি চলাচলের এমন রুট নেই। আর ফেরির রুটে গেলে বিকল্প পথে ঘুরে আসারও এমন রাস্তা নেই। তবে চোখ বাঁধা অবস্থায় সময় বা অবস্থান আবু বকর ঠিক বুঝেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

আবু বকর সিদ্দিক তাঁর বর্ণনায় একবার বলেছেন, যে বাড়িতে তাঁকে রাখা হয়েছে সেখানে দুজন কেয়ারটেকারের মতো লোক ছিল। আবার বলেছেন, মনে হয় তিনজন ছিল। তাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। শুধু টয়লেটে যাওয়ার সময় তাঁর চোখ খুলে দেওয়া হয়েছে। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর আবার বাঁধা হয়েছে। তিনি মেঝেতে ছিলেন। তাই নোংরা টয়লেট ছাড়া কিছুই দেখেননি। তবে বর্ণনায় বলেছেন, বুধবার রাত ১০টার দিকে অপহরণকারী দলের ‘বড় ভাই’ তাঁর সঙ্গে দেখা করেছে। পরদিনও রাত ১০টার দিকে ওই বড় ভাই এসে কথা বলে। সোয়া ১০টার দিকে তাঁকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।

সূত্র মতে, এসব আনুমানিক সময় স্পষ্টভাবে বলতে পারাটাই ‘অস্পষ্টতার’ বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিদ্দিকের দাবি, যে বাড়িতে তিনি ছিলেন এর পাশে একটি মসজিদ ছিল। সেখানে আজান শুনে সময় বুঝেছেন। রাত ১০টার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে এশার নামাজের আজান হয়। সিদ্দিকের বর্ণনা অনুযায়ী ঢাকার কাছাকাছি গাজীপুর, সাভার, মুন্সীগঞ্জ বা মানিকগঞ্জে অপহরণের স্পট খুঁজতে শুরু করেছে তদন্তকারীরা। তবে বর্ণনায় অনেক গরমিল থাকায় খেই হারাতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে উদ্ধার বিষয়ে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুরের আনসার ক্যাম্প এলাকায় তাঁকে গাড়ি থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাঁর পায়ে জুতা ছিল না। অপহরণকারী ‘বড় ভাই’ বাসায় যাওয়ার ভাড়া বাবদ তাঁর পকেটে ৩০০ টাকাও গুঁজে দেয়।

সাধারণত অপহরণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো তথ্য না দেওয়ার হুমকি থাকলেও আবু বকরকে এমন কোনো হুমকি দেয়নি বড় ভাই। আনসার ক্যাম্প থেকে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় ফেরার জন্য রিকশায় করে মিরপুরের কাজিপাড়ার দিকে যান আবু বকর। সাধারণত আনসার ক্যাম্প এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত লোকজন থাকে। এ ছাড়া কিছুদূর গেলেই টেকনিক্যাল মোড়ে অথবা দারুসসালাম থানায় পুলিশের সহায়তা নিতে পারতেন তিনি। একজন সচেতন মানুষ অপহৃত হয়েও এমন কারো সহায়তা নেননি- এটাও প্রশ্ন। কাজিপাড়ায় এসে তিনি সিএনজি অটোরিকশাচালক হাফিজউদ্দিনের সহযোগিতা চান। এরপর ধানমণ্ডির পুলিশ চেকপোস্টে তাঁকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি আটক করে। জানা গেছে, আবু বকর সিদ্দিক অপহৃত হওয়ার পর রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টগুলোকে সতর্ক করা হয়। তবে আনসার ক্যাম্প থেকে ধানমণ্ডি আসা পর্যন্ত সিদ্দিক কোনো পুলিশ চেকপোস্টে আটক হননি। রাত সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পার করলেও স্ত্রী রিজওয়ানা হাসানকে কোনোভাবে ফোন করেননি। এ ব্যাপারে সিদ্দিকের দাবি, তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনের নম্বরটি তাঁর মুখস্থ ছিল না।

তবে তদন্তসংশ্লিষ্টদের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার, খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশবাদী আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান দীর্ঘদিন ধরে যে মোবাইল ফোন নম্বরটি ব্যবহার করেন তা অনেক মানুষের কাছেই আছে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও রিজওয়ানা হাসানের ফোন নম্বর আছে, যা অনেকেরই প্রায় মুখস্থ। এদিকে উদ্ধারের সময় আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে একটি গামছা ছিল, যেটি দিয়ে তাঁর চোখ বাঁধা ছিল বলে তিনি জানান। তবে বর্ণনায় সিদ্দিক জানান, অপহরণের সময় তাঁকে কালো কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে দেওয়া হয়।

গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জের আদালতে সিএনজি অটোরিকশাচালক হাফিজুর রহমান জবানবন্দিতে বলেছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কাজীপাড়া থেকে তাঁর অটোরিকশায় ওঠেন আবু বকর সিদ্দিক। এ হিসাবে আনসার ক্যাম্প থেকে কাজীপাড়ায় যেতে তাঁর সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। এখানে দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্ণনা বা ঘটনার সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে তাঁরা এ রকম অনেক অস্পস্টতাই পাচ্ছেন। এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টা চলছে তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে।



মন্তব্য চালু নেই