অভিভাবকহীন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : আটকে গেছে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা
উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার না থাকায় পুরোপুরি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো উপ-উপাচার্য বা প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার। সবশেষ গত ১৭ এপ্রিল উপচার্যের (ভিসি) পদে থাকা প্রফেসর ড. হারুন-অর রশীদের চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনিও এ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। যেকারনে আটকে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতার পাশাপাশি পাঁচটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকসহ সব দপ্তরেই দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন ভিসি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব, ইউনির্ভাসিটি অব নটিকেশন (ইউকে) থেকে পিএসডি ডিগ্রিধারি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রফেসর ওয়াহেদুজ্জামানের নাম শোনা গেলেও রহস্যজনক কারনে সেটিও থমকে রয়েছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, ভিসি না থাকায় আটকে পরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমীক বহু সিদ্ধান্ত। জারমধ্যে একাডেমীক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট, পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভিসি না থাকায় ৫টি বিভাগের ২০১১-১২, ১২-১৩ এবং ১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ফলাফলও আটকে পরেছে।
নতুন ভিসি না আসা পর্যন্ত এ ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না বলেও সূত্রটি জানিয়েছেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, সদ্যবিদায়ী ভিসি প্রক্টরিয়াল বডির প্রধানসহ একাই ১১টি বিভাগের চেয়ারম্যান, ৫টি ফ্যাকাল্টির ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। এসব পদে তিনি কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে এসব বিভাগের সকল কার্যক্রম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালক ছিলেন বিদায়ী উপাচার্য। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমীক ভবনসহ ১২টি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থমকে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ইতোমধ্যে আটকে গেছে নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বিভাগের আসবাবপত্র ও কম্পিউটার ল্যাবের জন্য কম্পিউটার ক্রয় প্রক্রিয়া। পাশাপাশি আটকে গেছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর কায়সার বলেন, সাবেক উপাচার্য একইসাথে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভাগের ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রক্টর বডির প্রধান ছিলেন। তার অবর্তমানে এসব সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষকরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, ভিসি থাকলে মাসের ২৯ তারিখে শিক্ষক-কর্মকর্তারা বেতনের আশা করতে পারতেন, কিন্তু ভিসি না থাকায় এপ্রিল মাসের বেতনের বিষয়ে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। এছাড়া ভিসি না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে ছোট-খাটো বরাদ্দও ছাড় করা যাচ্ছেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমীক সিদ্ধান্তও থমকে রয়েছে। শুরু থেকে প্রো-ভিসি না থাকায় সব মিলিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন পুরোপুরি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভিসি নিয়োগের বিকল্প নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমীক কার্যক্রমে স্থবিরতার বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন গোলাপ জানান, ভিসি না থাকলে একাডেমীক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ, কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা ও শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমের ওপরও প্রভাব পড়তে শুরু করবে। তাই তিনিও জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১৫ এপ্রিল বিদায়ী ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর রশীদ খান তার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। ১৭ এপ্রিল তিনি ভিসির দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন। সেই থেকে অদ্যবর্ধি মন্ত্রণালয় থেকে নতুন ভিসি’র ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তিনি আরো জানান, নতুন ভিসি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব, ইউনির্ভাসিটি অব নটিকেশন (ইউকে) থেকে পিএসডি ডিগ্রিধারি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী প্রফেসর ওয়াহেদুজ্জামানের নাম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
মন্তব্য চালু নেই