অনাগত সন্তানের স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন ছাত্রলীগ নেত্রী বৃষ্টি
অনাগত সন্তানের স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতার কাছেই গিয়েছিলেন কাফরুল থানা ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা তুজ্ জোহরা বৃষ্টি। তবে বৃষ্টির চোখের বৃষ্টি কারও মনই গলাতে পারেনি। সবাই ‘দেখব’, ‘দেখছি’ লোক দেখানো এ সান্ত্বনার বাণীই দিয়েছিলেন বৃষ্টিকে।
অন্যদিকে, বিচার চাওয়ার অভিযোগে বৃষ্টির প্রতি ক্রমেই ক্রুদ্ধ হতে থাকেন অভিযুক্ত মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম জাহিদ মাহ্মুদ। প্রতিকার চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন হতভাগা বৃষ্টি। তবে কোনো লাভ হয়নি। জাহিদ ও তার সহযোগীদের একের পর এক হুমকিতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছিল বৃষ্টির পরিবার। ক্রমেই ছোট হয়ে আসতে থাকে বৃষ্টির পৃথিবী।
এক পর্যায়ে অপমান সইতে না পেরে ১৯ জুন এ পৃথিবী থেকেই নিজেকে আড়াল করে নেন বৃষ্টি। ১৩২০ পূর্ব শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসায়ই ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে বৃষ্টির পরিবার কাফরুল থানায় গিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিলে আরও চড়াও হয়ে ওঠেন জাহিদ ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ জাহিদকে গ্রেফতার করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাফরুল থানার সামনে থেকে জাহিদকে গ্রেফতারের পর থেকেই একের পর এক হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বৃষ্টির পরিবারের সদস্যরা। আবার প্রভাবশালী একটি মহলের হস্তক্ষেপে মামলাটিতে আত্মহত্যার প্ররোচনার ধারাটি উল্লেখ করা হয়েছে। থানায়ও জামাই আদরে ছিলেন জাহিদ। তবে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কাফরুল ও মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মানববন্ধনের পর থেকেই বাড়তে থাকে হুমকির মাত্রা।
অভিযোগ উঠেছে, বৃষ্টির মৃত্যুর পর থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কেউ তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো মামলা না করার জন্য বৃষ্টির পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য নেপথ্যে থেকে জাহিদকে সহযোগিতা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এক সংসদ সদস্যের রাজনীতি করেন জাহিদ। মূলত তার কারণেই জাহিদ এত বড় অন্যায় করেও বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী একজনের বাড়িও জাহিদের এলাকায়। তারও নেপথ্য সহযোগিতা রয়েছে। এদের কারণে মামলায় কেবল আত্মহত্যার প্ররোচনার ধারাটি উল্লেখ করা হয়েছে। থানায়ও জামাই আদরে ছিল জাহিদ। আদালতে কোনো রিমান্ডও চায়নি পুলিশ। জাহিদের কী হবে, তা তো অনুমানই করা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘বৃষ্টি আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে এ বিষয়টি আমি শুনেছি। সমাধানের জন্য অনেকে উদ্যোগও নিয়েছিলেন। জাহিদ বলেছিল সে নিজেই সমাধান করে নেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আমরা অনুরোধ করব সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।’ কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসলাম উদ্দীন বলেন, ‘আসামি জাহিদকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো রিমান্ড চাওয়া হয়নি।’
এদিকে, বৃষ্টির ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ১২ জুন রাত ১১টা ৪১ মিনিটে একটি পোস্টে নিজের অব্যক্ত যন্ত্রণার কথা লিখে গেছেন তিনি। নাম উল্লেখ না করা ওই যুবককে অভিশাপও দেন। তবে পোস্টটির নিচের দিকে ওই যুবকের প্রতি বৃষ্টির গভীর ভালোবাসার কথাও ফুটে উঠেছে। লিখেছেন, ‘আমারে তোর প্রয়োজন আজ হোক বা কাল হইবই, হারামির বাচ্চা ওইদিন তোরে আমি ঠিকই মাফ কইরা দিমু, কারও ভালো সময় চিরদিন থাকে না। ওহে চিরন্তন কুত্তা তোরও থাকব না, তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক, শালা আবাল কোথাকার।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন
মন্তব্য চালু নেই