এক সন্ন্যাসীর প্রভাবে বদলে গেলেন শি জিনপিং
 
            
                     
                         
       		১৯৮২ সালে চীনের হিবে প্রদেশের ক্রমবর্ধনশীল রাজধানী শিজিয়াজুয়াংয়ের ধুলোবালিময় একটি শহর ঝেংডিংয়ে এসে উপস্থিত হওয়া একজন হলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শি ইয়াওমিং। ঝেংডিংয়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের পুরোহিত তিনি। অপরজন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এক শীর্ষ কর্মকর্তার ছেলে ২৯ বছর বয়সী শি জিনপিং। ওই সময় চীন সরকারের একজন আমলা হিসেবে কাজ করছিলেন জিনপিং। একজন সন্ন্যাসীর সঙ্গে সরকারি এক আমলার যে সখ্য সেদিন গড়ে উঠেছিল, তা আজও তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ দর্শনের অন্যতম বিখ্যাত সূতিকাগার ঝেংডিং শহরের লিনজি মন্দির। জিনপিংয়ের সমর্থনে ও সহায়তায় ওই জরাজীর্ণ মন্দিরটির পুনর্নির্মাণ করেন সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসী ইয়াওমিংয়ের সঙ্গে নিয়মিতই দেখা করতে যেতেন জিনপিং। এমনকি ঝেংডিং থেকে জিনপিংকে অন্যত্র বদলি করার পরও। ধর্ম ও দলের মধ্যকার সম্পর্ক অধ্যয়নের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদেরও সেখানে পাঠাতেন তিনি। ধর্মীয় জীবনের সঙ্গে জিনপিংয়ের ওই সংস্পর্শ তাকে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এক অন্য মানুষে পরিণত করে। যিনি মাও সেতুংয়ের পর থেকে অন্যান্য নেতার তুলনায় দৃঢ় হাতে চীনকে পরিচালনা করছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান কিংবা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ভূখণ্ড বিস্তারের জন্য সুপরিচিত তিনি। এ ছাড়া চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তিনি। ধর্মের সঙ্গে সংশ্রবের মাধ্যমে চীনের আধ্যাত্মিক জীবন পুনরুজ্জীবিত করার একটা প্রচেষ্টা তার মধ্যে রয়েছে। সংগঠন হিসেবে যে কমিউনিস্ট পার্টি একসময় ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্ট করেছে, জিনপিংয়ের অধীনে সেই কমিউনিস্ট পার্টিই বর্তমানে ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। একইভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতো শক্তিশালী নেতাও ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। নিজেদের শাসন-শোষণকে বৈধতা দেয়ার জন্য ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবহার করছেন এই বিশ্বনেতারা। ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা ও ক্ষয়িষ্ণু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মুখে ক্ষমতা ধরে রাখতে ধর্মের দিকে ফিরে আসছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। চীনকে বৌদ্ধ ধর্মের মতো একটি বড় ধর্মবিশ্বাসের অভিভাবক করে তুলছে জিনপিং। বিশ্ব দরবারে চীনের অবস্থান নিশ্চিত করতে ধর্মকে একটা অবলম্বন হিসেবে দেখছেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম সম্পর্কে জিনপিংয়ের বর্তমান অভিমত- ‘জনগণ যদি ধর্মবিশ্বাসী হয়, জাতির একটা আশা থাকে, আর দেশ পায় শক্তি।’
তবে চীনের কমিউনিস্টরা ধর্মের প্রতি সব সময় শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন না। ১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধে জয়ের আগে কমিউনিস্ট পার্টি চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নির্বাসিত হয়েছিলেন। ওই অঞ্চলের তিব্বতীয় বৌদ্ধ ও হুই মুসলিমদের সহযোগিতা তাদের দরকার ছিল এবং তারা তা পেয়েছিলেন। মতাদর্শিকভাবে কমউিনিস্ট পার্টিতে ধর্মের কোনো স্থান নেই। আর তাই গৃহযুদ্ধে জয়লাভের পর মাও সেতুং নিজ থেকে লাখ লাখ মন্দির, চার্চ এবং মসজিদ ধ্বংস করেছিলেন। তবে দলের অন্য কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা এদের হাতে আসে। জিনপিংয়ের বাবা শি ঝংশান কমিউনিস্ট পার্টির উদার অংশের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ১৯৮০ সালের শুরুতে পার্টির ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ছিলেন তিনি। দু’বছর পর ধর্মীয় নীতির ওপর ‘ডকুমেন্ট ১৯’ হিসেবে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ দলিল ইস্যু করে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। ১১ হাজার শব্দের ওই প্রতিবেদন ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পার্টির সদস্যদের হুশিয়ার করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জনগণকে দূরে ঠেলে দেবে। এ ছাড়া মন্দির, মসজিদ ও চার্চের পুনর্নির্মাণের আহ্বান এবং ধর্মীয় পেশাজীবীদের পুনবার্সনের ব্যবস্থার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। ওই বছরই জিনপিং সন্ন্যাসী ইয়াওমিংয়ের সঙ্গে ঝেংডিংয়ে এসে উপস্থিত হন। তার সহায়তায় পুনর্নির্মিত হয় জরাজীর্ণ লিনজি মন্দির। জিনপিং সম্ভবত ধর্মকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে দেখেছিলেন। ঝেংডিংয়ের সঙ্গে জিনপিংয়ের বাবা বা পারিবারিক যে সম্পর্ক ছিল তাকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে লিনজি মন্দিরের উদ্বোধন করেন জিনপিং। জরাজীর্ণ একটি প্যাগোডা থেকে লিনজি মন্দির বড় একটি ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ ভাষান্তর : জামির হোসেন
















 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	
মন্তব্য চালু নেই