হাসিনা মার্কেটে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হাসিনা মার্কেটে শুধুই পোড়া গন্ধ। রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের পণ্যের মজুদ গড়ে তুলেছিল। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সব পুড়ে ছাই। বিভিন্ন ধরনের খুচরা দোকান, মুদি দোকান, খাবার হোটেল, লেপ-তোশকের দোকান, পানির দোকান, চা ও ফলের দোকান ছিল। রমজানকে সামনে রেখে দোকানগুলোতে পণ্যে ঠাসা ছিল।

সোমবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর পোড়া বস্তা। হাসিনা মার্কেটের ১৮৬টি দোকানের মধ্যে প্রায় সবগুলোই পুড়ে ছাই। এক দোকানি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই সব শেষ। কী থেকে যে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। এখন কী খামু, কী করমু বুঝতে পারছি না’।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় শতাধিক কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বলাবলি হচ্ছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে তখনও বেশ কয়েকটি দোকান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। সব হারিয়ে একজন ব্যবসায়ীকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গেল, ‘আমার সব শেষ, আমার সব শেষ’।

আরেক জন ব্যবসায়ীকে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখা গেল। এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন নামে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার ৪০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে শেষ। এখন আমি কী করমু।’ আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সকালেও গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় লেগে ছিল।

আব্দুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী অভিযোগের সুরে বলছিলেন, দমকলকর্মীরা দেরিতে আসায় ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কেটটি।

জানা গেছে, যখন আগুন লাগে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছিল। তবে জেনারেটর চলছিল। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে আগুন মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় আগুনও ছাড়াতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে মার্কেটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। হাসিনা মার্কেট হিসেবে পরিচিত হলে মার্কেটটির প্রকৃত নাম ৫০ নং প্লট জনকল্যাণ সমবায় সমিতি মার্কেট। এ সমিতির ২০০ জন সদস্য মিলে মার্কেটটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ১৮৬টি দোকান ছিল; এর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি দোকান কোনো রকম রক্ষা পায়।

আগুনের সূত্রপাত: মার্কেটের মধ্যবর্তী বন্ধ একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। দোকানটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। আগুনের সূত্র কীভাবে তা জানতে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, সিগারেটের আগুন থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। মার্কেটের প্রতিটি দোকানের উপরে ঘুমানোর জন্য মাচা আছে। সেখান থেকে কেউ একজন সিগারেট খেয়ে ফেললে সেখান থেকে আগুন লাগে। সেখান থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং ওই সময় বাতাস শুরু হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

কয়েকজন বলছিলেন, জেনারেটরের শর্টসার্কিট থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে আগুন লাগার কারণ বের করতে ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মার্কেটের ছয়টি দোকানের মালিক মিজানুর রহমান জানান, তিনদিন ধরে বন্ধ থাকা একটি দোকান থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে কিভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটে তা তিনি জানাতে পারেননি।

দোকানদার আব্দুর রশিদ জানান, আগুনে তার চারটি দোকান পুড়ে গেছে। দোকানে সকল মালামাল ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই। দোকানে থাকা একটি জেনারেটর, মটর ও পানির পাইপসহ লক্ষাধিক নগদ টাকাও পুড়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, সব মিলিয়ে তার ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দোকানদার দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি ২০ বছর ধরে মার্কেটটিতে ব্যবসা করছেন। তার কনফেকশনারির দোকানে সকল মালামালের সঙ্গে দুটি ফ্রিজ পুড়ে গেছে। এছাড়া দোকানে থাকা লক্ষাধিক টাকাও পুড়ে গেছে।

স্টেশনারির দোকানদার শহিদুল্লাহ বলেন, তার দোকানে থাকা একটি কম্পিউটার, দুটি ফ্রিজসহ সব মালামাল পুড়ে গেছে। তার প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।ঢাকাটাইমস।



মন্তব্য চালু নেই