হঠাৎ বিকট শব্দে চারদিক অন্ধকার
‘সময় দুপুর ১২টা বেজে ২৩ মিনিট। হঠাৎ বিকট শব্দ। তারপর চারদিক অন্ধকার। তারপর রক্তাক্ত দেহ।’ চোখে ঝাঁঝ নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বোম ডিসপোসাল ইউনিটের এডিসি ছানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সোয়াত ও বোম ডিসপোসাল ইউনিটের সদস্যরা ওই বাসাটির নিচে গাড়ি পার্কিঙের স্থানের কাছে একটি পিলারের পাশে অবস্থান করছিল।’
এডিসি ছানোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ ১২টা ২২মিনিটে একজন মহিলা একটি ৭ বছরের শিশু নিয়ে বের হচ্ছিলেন। শিশুটি মহিলার বাম হাত ধরে বের হয়ে আসছিলেন। মহিলা বোরকা পরা ছিলেন। তাকে আত্মসমপর্ণের জন্য বলার পর বোরকার ভেতর থেকে ডান হাত উপরে তুলতে দেখে আমি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সবাইকে সাবধান হতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর রক্তাক্ত অবস্থায় মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখি। পাশে শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় নড়াচড়া করতে দেখে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ’
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, মহিলাটির শরীরে হয়তো গ্রেনেড বাঁধা ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সবাই সতর্ক হয়ে যাই। তার লাশ ফ্লোরে পড়ে আছে।’
এর আগে আশকোনার হাজি ক্যাম্পের কাছে ৫০ নম্বর সূর্য ভিলায় অবস্থান নেওয়া জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য বার বার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও আত্মসমর্পণ না করায় তিন জঙ্গিকে পরাস্ত করতে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। শনিবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে এই অভিযান শুরু হয়। এরপরই একের পর এক গুলি আর বোমায় কেঁপে ওঠে রাজধানীর উত্তরের জনবসতিপূর্ণ বিমানবন্দরসংলগ্ন আশকোনা এলাকা।
অভিযানের আগে অল্প সময়ের জন্য পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছান। নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদ ও জঙ্গি মুসার স্ত্রী এবং তাদের দুই শিশু সন্তানসহ আত্মসমর্পণের পর থেকেই অন্য জঙ্গিদেরও আত্মসমর্পণের জন্য বারবার আহবান জানায় র্যাব, পুলিশ ও সোয়াত। কিন্তু জঙ্গিরা সে আহবানে সাড়া না দেওয়ায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজধানীর আশকোনায় সূর্য ভিলা নামের ৫০ নম্বর হোল্ডিঙের বাড়িতে থাকা তিন জঙ্গি সকাল থেকেই তাদের কাছে ভারি অস্ত্র, বিস্ফোরক থাকার কথা জানিয়ে অভিযান চালালে বড় রকম বিস্ফোরণ ঘটানোর হুমকি দেয়। তারা তাদের নিজেদের শরীরেও গ্রেনেড বেঁধে রেখেছে বলে আইনশৃ্ঙ্খলাবাহিণীর সূত্র নিশ্চিত করে। চূড়ান্ত পরাস্ত হওয়ার মুখোমুখি হলে জঙ্গিরা গ্রেনেড বিস্ফারণ ঘটিয়ে নিজেরা নিজেদের উড়িয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করে পুলিশ।
অভিযানের সময় জঙ্গি আশ্রয় নেওয়া বাড়ির আশপাশের সব বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, টঙ্গি, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যে কটি জঙ্গিবিরোধী অভিয়ান চালিয়েছে সিটিটিসি এর কোনওটিতেই কোনও জঙ্গি জীবিত আটক করা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য চালু নেই