বিক্ষিপ্ত ভাবনা || মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১.

কেউ যদি কখনও কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করে আর সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যায় তাহলে তার এক ধরনের আনন্দ হয়। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম, এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল, অবরোধ তুলে নেয়া হবে না এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা ঠিক করে পরীক্ষাও দিতে পারবে না। আমার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেছে কিন্তু আমি সে জন্য বিন্দুমাত্র আনন্দ অনুভব করছি না। বড় মানুষেরা নানা ধরনের অর্থহীন রুঢ় কাজ করে। একে অন্যের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা করে কিন্তু পৃথিবীর সবখানে একটা অলিখিত নিয়ম যে, কমবয়সী ছেলেমেয়েদের সকল নিরানন্দ, নিষ্ঠুরতা থেকে আড়াল করে রাখা হবে। এবার আমার সেই ধারণায় চোট খেল। দেশের প্রায় পনেরো লক্ষ এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হরতালের আওতার বাইরে রাখা হলো না। একটি একটি করে পরীক্ষা পিছিয়ে নেয়া হচ্ছে, কবে পরীক্ষা হবে সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা তো আছেই, এর সঙ্গে ছেলেমেয়েদের কপালে নতুন দুর্ভোগ যোগ হয়েছে- দুটি পরীক্ষার মাঝখানের বিরতিগুলো কমে আসছে। ছেলেমেয়েদের মাঝে হতাশা আর ক্ষোভ। যেহেতু এই আন্দোলন আসলে মানুষ পুড়িয়ে ক্ষমতা দেখানোর আন্দোলন তাই পরীক্ষা দিতে যাওয়া ছেলেমেয়েদের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক, তাদের বাবা-মায়েদের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

আমি আসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারি না। এমন তো নয় যে, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন করে জামায়াত-বিএনপি নতুন সরকার গঠন করার পর এই দেশের সব মানুষকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে নতুন কিছু মানুষ আমদানী করবে এবং সেই মানুষগুলো নিয়ে এই দেশ চালানো হবে! যারা পরীক্ষা দিতে পারছে না, তারা তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন নিয়েই তো এই দেশ। তাদের কারো মনের ভেতর কী এই আন্দোলনের জন্যে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি আছে নাকি সহানুভূতি থাকা সম্ভব?

যখনই দেশে কোনো বড় পরীক্ষা হয় তখনই আমি ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে অনেক ফোন পাই, ই-মেইল পাই, এসএমএস পাই। সবাই আমাকে তাদের জন্য দোয়া করতে বলে। আমি তখন সত্যি সত্যি খোদার কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। মনে মনে বলি, ‘খোদা এই ছেলে কিংবা মেয়েটার পরীক্ষা ভালো করে দাও।’

এই বছর আমার কাছে যখন টেলিফোন, ই-মেইল আর এসএমএস আসছে আমি পরীক্ষার জন্য দোয়া না করে মনে মনে বলছি, ‘খোদা এই ছেলে কিংবা মেয়েটা যেন পরীক্ষা দিয়ে সুস্থভাবে নিরাপদে ঘরে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দাও।’ ভালো পরীক্ষা এখন এই দেশের মূল বিষয় নয়। নিরাপদে পরীক্ষাগুলো শেষ করা এখন মূল বিষয়! কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না!

২.

গত সপ্তাহে টানা পাঁচদিন হরতাল ছিল তারপর দুইদিন শুক্র, শনিবার একটু বিরতি। তারপর আবার পাঁচদিনের একটানা হরতার। পরের সপ্তাহে কী হবে আমরা এখনও জানি না। শুধু অবরোধে আর হচ্ছিল না তাই অবরোধের সঙ্গে হরতাল জুড়ে দেয়া হচ্ছে। হরতাল দেয়া খুবই সহজ- শুধুমাত্র একটা ঘোষণা দেয়া। সাথে সাথে বাস পোড়ানো, ট্রাক পোড়ানো এবং মানুষ পোড়ানোর একটা অধিকার জন্মে যায়। কোনো রকম অপরাধবোধ ছাড়া মানুষ পুড়িয়ে মারার এতো সহজ অধিকার আর কোথাও কেউ পায় কিনা আমার জানা নেই।

মাঝে মাঝে আমার মাথার মধ্যে একটা বিচিত্র চিন্তা খেলা করে। পত্রপত্রিকা বা সংবাদ মাধ্যমগুলো অনেক সময় কিছু খবর একটু রয়েসয়ে প্রকাশ করে। আমেরিকার একজন ধর্মযাজক একবার ঘোষণা দিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়েছিল, আমাদের সংবাদমাধ্যম এই খবরটা সেভাবে প্রচার করেনি। কারণটা খুবই সহজ, দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ খবরটা পড়ে বিচলিত হয়ে যেন হাঙ্গামা শুরু না করে, আর সেই হাঙ্গামার কারণে যেন অন্য ধর্মের নিরপরাধ মানুষেরা বিপদে পড়ে না যান! সোজা কথায় বলা যায়, যে খবর ছাপা হলে দেশের কিংবা দেশের মানুষের ক্ষতি হয় সেই খবর না ছাপানো কিংবা প্রচার না করা এমন কিছু অবাস্তব কিংবা অযৌক্তিক ব্যাপার না।

হরতালের খবর ছাপা হলে দেশের মানুষের ক্ষতি হয়। স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েরা যেতে পারে না, দিন মজুরের সন্তানেরা না খেয়ে থাকে, লোকজন যাতায়াত করতে পারে না, ব্যবসা নষ্ট হয় এবং এ সবের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে মানুষ পুড়িয়ে মারা! কাজেই যদি দেশের সকল পত্রিকার সম্পাদক এবং সকল টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকেরা বসে ঠিক করতেন যে, এখন থেকে তারা কবে হরতাল ডাকা হয়েছে সেই খবরটি প্রকাশ করবেন না, রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিজেদের দায়িত্বে সেই খবর প্রচার করতে হবে- তাহলে কেমন হতো?

আমি কল্পনায় দেখতে পাই একটা হরতাল ডাকার পর রাজনৈতিক দলের কর্মীরা পোস্টার ছাপাচ্ছেন, লিফলেট ছাপাচ্ছেন, ঘুরে ঘুরে সেগুলো বিলি করছেন। সবার টেলিফোন নম্বর জোগাড় করে তাদের এসএমএস পাঠাচ্ছেন। ফেসবুকে খবরটা প্রচার করার চেষ্টা করছেন। মাইক ভাড়া করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খবরটা প্রচার করার চেষ্টা করছেন। এমন হলে সারা দেশে শুধুমাত্র হরতালের দিনক্ষণ জানাতে গিয়েই তাদের কালো ঘাম ছুটে যেত- টাকা পয়সার কথা ছেড়েই দিলাম! লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দলের সব কর্মীদের ব্যবহার করেও তারা নিশ্চিত হতে পারতেন না হরতালের খবরটা সবার কাছে পৌঁছেছে কিনা! একটা হরতালের কারণে দেশের মানুষের কষ্টের কোনো সীমা থাকে না, তাহলে যারা হরতাল ডাকে তারা কেন একটু কষ্ট করবে না? সবকিছু তাদের জন্য কেন এতো সহজ করে দেয়া হবে?

৩.

খবরের কাগজ পড়ে আমরা সবাই জেনেছি বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে মারার যে আন্দোলন শুরু করেছে সেটি থেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই সরকারের ‘পতন’ হবে ততদিন এই মানুষ পুড়িয়ে মারা চলতে থাকবে। আমি চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করছিলাম, আমাদের দেশে কতোবার আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল। বোঝার বয়স হবার পর প্রথম সরকার পতন দেখেছি ১৯৬৯ সালে। আমি তখন ঢাকা কলেজে পড়ি। আইয়ূব সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশে আন্দোলন হচ্ছে, আমাদের কলেজেও তার ছোঁয়া লেগেছে। আমার মতো যে দুর্বলচিত্ত নিরীহ মানুষ- আমিও কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপদ অবস্থানে থেকে রাস্তায় মোতায়েন করা ইপিআরদের দুই চারটা ঢিল মেরেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে ইপিআর-এর মানুষগুলো আমাদের ডেকে বলল, ‘আমাদের শুধু শুধু ঢিল মারছ কেন? আমরা বাঙালি। আমরাও তোমাদের সঙ্গে আন্দোলনে আছি। নেহায়েত চাকরি করি বলে এখানে ডিউটি করছি!’

আমরা তখন ঢিল ছোড়া বন্ধ করেছিলাম। তবে দেশের সব মানুষ মিলে বিশাল আন্দোলন শুরু করেছিল বলে আইয়ূব খান পদত্যাগ করেছিল- সরকারের পতন হয়েছিল! এখন যে গেটটাকে আমরা আসাদ গেট বলি ঊনসত্তুরের আগে সেই গেটের নাম ছিল আইয়ূব গেট। জানুয়ারির ২০ তারিখ আসাদ গুলিতে মারা যাবার পর এই গেটটির নাম দেয়া হয়েছিল আসাদ গেট।

ঊনসত্তুরের পর সরকারের ‘পতন’ দেখেছি একাত্তরে! অবশ্য একাত্তরকে কেউ সরকারের পতন হিসেবে দেখে না। সেটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, রীতিমত যুদ্ধ করে পাকিস্তান সরকারকে ঝেটিয়ে বিদায় করে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। (পাকিস্তান বিদায় হয়েছে কিন্তু পাকিস্তানের ভূত এখনো বিদায় হয়নি। এই দেশে এখনো পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করা জামায়াতে ইসলামী রয়ে গেছে, যরা এখন বিএনপি’র হয়ে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারার দায়িত্ব নিয়েছে।)

একাত্তরের পরে সরকারের পতনটি ছিল এই দেশের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা। সেটা ছিল একটা সেনা অভ্যুত্থান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে সরকারের ‘পতন’ করা হয়েছিল। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অভ্যুত্থান হয়ে শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশে সামরিক শাসন তার আসন গেড়ে বসে। ১৯৭৬ সালে আমি দেশের বাইরে চলে যাই। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার খবরটি পেয়েছিলাম দূর থেকে। ১৯৮২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে চতুর্থবার সরকারের পতন হলো। এবার ক্ষমতায় এলেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। এই মানুষটি প্রচণ্ড দাপটে দেশ শাসন করেছিল আট বছর। ১৯৯০ সালে তার সরকারের পতন হলো গণঅভ্যুত্থানে! দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলো।

আমি দেশে ফিরে এসেছি ১৯৯৪ সালের শেষে এবং ১৯৯৬ সালেই আবার সরকারের ‘পতন’ দেখলাম। সরকারে থাকা বিএনপি তাদের ভোটারবিহীন নির্বাচন করে গণঅভ্যুত্থানের কারণে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহের ভিতরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে সরে গিয়েছিল। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি আরেকটা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ১১ জানুয়ারি আবার একটা সরকারের ‘পতন’ হলো- এটাও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে। এই হচ্ছে খুব সংক্ষেপে এই দেশে সরকার ‘পতনের’ ইতিহাস। নির্বাচন হয়ে যদি সরকার পরিবর্তনগুলোকে হিসেবে না আনি তাহলে জোর করে সরকারের পতন হয় দুই কারণে- হয় গণঅভ্যুত্থানে, না হয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে। নিজ থেকে হাসিমুখে কোনো সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়নি।

বিএনপি-জামায়াত ঘোষণা দিয়েছে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তাদের কাছে যেটা আন্দোলন এই দেশের মানুষের কাছে সেটা শুধু যে দুর্ভোগ তা নয়, সেটা হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারার একটা অবর্ণনীয় নৃশংসতা। তাদের মানুষ পোড়ানোর আন্দোলনে এক সময় দেশের সাধারণ মানুষ যোগ দিয়ে বিশাল একটা গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলবে সেটি ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা বরং উল্টোটা হতে দেখছি, যতই দিন যাচ্ছে, ততই দেখছি পাবলিক পেট্রল বোমা হাতে তাদের রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে নাতে ধরে শক্ত পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। শুক্র শনিবার বিরতি দিয়ে টানা দশদিন হরতাল ডেকে রাখলে সাধারণ মানুষ উৎসাহে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে এর বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। ছেলেমেয়েদের এসএসসি পরীক্ষা দিতে না দিলে সেই রাজনৈতিক দলের জন্য কারো মনে এতটুকু সমবেদনা হবে না। শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের অবর্ণনীয় নৃশংসতা দেখে হতবুদ্ধি হয়েছে তা নয়, নানা দেশের কূটনীতিকেরাও আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে।

এই দেশের মানুষ দাঁতে দাঁত চেপে এর মধ্যে এক মাসেরও বেশি সময় সরকার পতনের আন্দোলন সহ্য করে গেছে। যদি কোনো সমাধান না হয়, যদি তাদেরকে বাধ্য করা হয়, তাহলে তারা হয়তো আরো সহ্য করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র তখন কী অবস্থা হবে? তারা কী আদৌ একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে? আমি মোটেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই, আমার বিশ্লেষণ কাউকে মেনে নিতে হবে না। কিন্তু এই কথাটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, পৃথিবীর যে কোনো কিছু শতকরা নব্বই ভাগ কমনসেন্স দিয়ে বুঝে ফেলা যায়। শুধু তাই না, যে বিষয়টা কমন সেন্স দিয়ে বোঝা যায় না তার মাঝে যে বড় ধরনের গোলমাল আছে সেটা বোঝার জন্য আইনস্টাইন হতে হয় না। মানুষ পুড়িয়ে সরকারের পতন করতে না পারলে এক সময় সেনা অভ্যুত্থান হয়ে সরকারের পরিবর্তন হয়ে যাবে সেটাও মেনে নেয়া কঠিন। একটা মানবিক কারণ দেখিয়ে হরতাল অবরোধ তুলে নেয়ার অনেকগুলো সুযোগ ছিল, পুত্রের অকালমৃত্যুও তার মাঝে একটা কিন্তু কোনো সুযোগ গ্রহণ করা হলো না। যার অর্থ অবরোধ হরতাল চলতেই থাকবে।

আগামীকাল ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আমাদের দেশে এই দিবসটা আজকাল খুব হইচই করে পালন করা হয়। ধরা যাক এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিংবা ভালোবাসা দিবসের কারণে হঠাৎ করে সরকারের বুকের মাঝে ভালোবাসা উথলে উঠল এবং তারা ঘোষণা দিল কয়েকদিনের মাঝে আবার নতুন করে নির্বাচন হবে, তাহলেই কী সমস্যা মিটে যাবে? গত বছরেই তো একটা নির্বাচন হয়েছিল, কিন্তু সেই নির্বাচন থামানোর জন্য কী পরিমাণ তাণ্ডব হয়েছিল মনে আছে? যদি আবার নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে কী তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দবিতে আবার সেই তাণ্ডব, সেই মানুষ পোড়ানো, সেই স্কুল পোড়ানো শুরু হয়ে যাবে না?

৪.

এটা ফেব্রুয়ারি মাস। আমাদের বাংলা ভাষার মাস, পৃথিবীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাস। আমরা যারা বই পড়ি, বই লিখি তাদের জন্যে আরো একটা বাড়তি আনন্দের- বইমেলার মাস। আমি যেহেতু সিলেটে থাকি তাই আমাকে বইমেলা দেখার জন্য সিলেট থেকে ঢাকা যেতে হয়। এই বছর হরতাল অবরোধের কারণে ইচ্ছে হলেই সিলেট থেকে ঢাকা চলে আসতে পারি না। খবরের কাগজে বইমেলার খবর পড়ি, কষ্ট করে হলেও কোনো এক সময় সিলেট থেকে ঢাকার বই মেলায় যাব। কিন্তু যাদের শখের বইমেলা নেই, অথচ জীবন-মরণ সমস্যা আছে তারা কী করবে? যে দিন মজুরটিকে ঘর থেকে বের হয়ে সারাদিন কাজকর্ম করে দিনের শেষে সন্তানদের জন্য খাবার কিনে আনতে হয় তারা যখন তাদের অভুক্ত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের কেমন লাগে?

আমরা বাংলাদেশের মানুষ এর থেকেও অনেক ভয়াবহ অবস্থা পার হয়ে এসেছি, কাজেই নিশ্চিতভাবেই একদিন এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে পার হয়ে আসব। শুধু দুঃখ, তখন আগুনে পুড়ে, বোমার আঘাতে কিংবা গুলির আঘাতে মারা যাওয়া অনেকগুলো মানুষ থাকবে না। তাদের আপনজনেরা অবাক হয়ে ভাববে পৃথিবীটা আমাদের জন্য এতো নিষ্ঠুর কেন? তাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। সেই অপরাধবোধের দায়ভার থেকে আমাদের কারো মুক্তি নেই।



মন্তব্য চালু নেই