ফতোয়া অবৈধ- আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

ফতোয়া দেওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েব সাইটে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করা হয়।

মোট ১৩৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ফতোয়া কারা দিতে পারবে, ফতোয়ার প্রেক্ষাপট ও পর্যবেক্ষণসহ বিচারপতিদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।

এ রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে। তবে যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তি তা দিতে পারবেন। আর ফতোয়া হলো একটি মতামত। এটি মানতে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে কোন বল প্রয়োগ বা অনান্য প্রভাব ব্যবহার করা যাবে না।

রায়ে আরো বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইনে বিধান আছে, এমন বিষয়ে ফতোয়া দিয়ে কারো অধিকার, খ্যাতি বা সম্মানহানি করা যাবে না। এর মাধ্যমে কোনো ধরনের শারিরীক বা মানসিক শাস্তিও দেয়া যাবে না।’

একই সঙ্গে ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১১ সালের ১২ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেছিলেন।

বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (সাবেক প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি এসকে সিনহা (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো. ইমান আলী।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ‘ফতোয়া’ নিয়ে আপিল বিভাগ ঘোষিত চূড়ান্ত ওই রায় লেখা শেষে বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর জনসাধারণের জন্য আজ প্রকাশ করা হলো।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ২ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ফতোয়া সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়, নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের আতিথা গ্রামের এক গৃহবধূকে ফতোয়া দিয়ে হিল্লা বিয়েতে বাধ্য করা হয়।

বিষয়টি নজরে এলে হাইকোর্ট স্বঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতি গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ সব ধরনের ফতোয়াকে অবৈধ বলে রায় দেন।

ওই রায়ে বলা হয়, একমাত্র আদালতই মুসলিম বা অন্য কোনো আইন অনুযায়ী আইন সংক্রান্ত কোনো মতামত দিতে পারেন। কেউ ফতোয়া দিলে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি মো. তৈয়ব এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আপিল করেন।



মন্তব্য চালু নেই