এতো সাংবাদিক এলে, অতিথিরা কোথায় বসবেন?

ইফতারের বাকি তখন আধা ঘণ্টা। বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপিপন্থি সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ। ঠিক তখনই ইফতারের টেবিল থেকে সাংবাদিকদের উঠিয়ে দিলেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা।

সাংবাদিকদের উঠিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি আদর্শ ঢাকার প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু; করেন কটূক্তিও। তিনি বলেন, ‘এতোগুলো যদি সাংবাদিক আসে, তাহলে অতিথিদের জায়গা দিব কোথায়? আর এখানে সাংবাদিকদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি।’

সোমবার রাজধানীর হোটেল ৭১-এ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে খাবার টেবিল থেকে এক বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের উঠিয়ে দেয় আয়োজকরা। এরপর সেই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন সংবাদ সংগ্রহে আসা অন্য সাংবাদিকরাও।

এদিকে ইফতার মাহফিলের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গতকাল রোববার সব গণমাধ্যমে অনুরোধ করে চিঠি পাঠান রফিক লিটন নামে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের এক নেতা। ‘সবিনয় নিবেদন’র ইফতার মাহফিলে যথাসময়ে হাজির হন গণমাধ্যমকর্মীরা।

অবশ্য ঘটা করে আয়োজন করা অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিলম্ব। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ সংগঠনের প্রধান অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় ওই অনুষ্ঠানে। এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বক্তব্য রাখেন।

একদিকে বক্তব্য চলছিল, অন্যদিকে ইফতারের প্রস্তুতি। একটি টেবিল থেকে এক বেসরকারি টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। সেই সময় আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুসহ দু’জন এসে সাংবাদিকদের ইফতারের টেবিল থেকে উঠে যেতে বলেন। তখন সাংবাদিকরা তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এখানে সাংবাদিকদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি। আপনারা অন্য জায়গায় বসতে পারেন।’ অথচ এ সময় হোটেল ৭১-এর ওই রুমটির সব টেবিলই বিএনপির সিনিয়র ও জুনিয়র নেতাকর্মী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের দ্বারা পরিপূর্ণ।

‘সাংবাদিকদের জন্য যদি বসার জায়গায় না-ই রাখবেন তাহলে ইফতার মাহফিল কাভারেজের জন্য দাওয়াত দিলেন কেন?’- এমন প্রশ্নের জবাবে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, ‘এখন অনলাইন হচ্ছে ১৫১টির বেশি, টিভিও সেই রকম ২০-৩০টার মতো, এতোগুলো যদি সাংবাদিক আসে, তাহলে অথিতিদের জায়গা দেবো কোথায়? আর এখানে সাংবাদিকদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি। এটা সিনিয়রদের ও অতিথিদের জন্য নির্ধারিত। আপনারা যদি অনুষ্ঠান কাভার করতে চান তাহলে দাঁড়িয়ে থেকেই করতে হবে।’

মিন্টুর অশোভন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে উপস্থিত  সংবাদ মাধ্যম, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মীরা অনুষ্ঠান বয়কট করে স্থান ত্যাগ করেন।

ড. এমাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, বিএনপি সমর্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসহ বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই। তারাও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।



মন্তব্য চালু নেই