পিন্টুর মৃত্যু : চিকিৎসায় গাফিলতি খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি
বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষ বা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি খুজেঁ পাওয়া যায়নি।
গত ৩ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন পিন্টু। সকালে তিনি স্বাভাবিক খাবার খান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজে চুলে কলপ লাগাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।পরে তার মৃত্যু হয়।
পিন্টুর মৃত্যুর পর কারাগারের ভেতরে চিকিৎসা সেবায় গাফিলতি নিয়ে পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পিন্টুর চিকিৎসার জন্য কারাগারে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক রইচ উদ্দীনকে চিকিৎসা করতে দেননি এমন অভিযোগও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কারাগার ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবার লিখিত বক্তব্য গ্রহণ ও স্বাক্ষাৎকার শেষে সার্বিক পর্যালোচনা শেষে তদন্ত কমিটি এ প্রতিবেদন দেয়।
ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দারের নেতৃত্বে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজনের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আনোয়ারুল কবির চৌধুরীর সমন্বয়ে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিন্টুর মৃত্যুতে কারা ও রামেক কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রুটি নেই। সব নিয়ম সঠিকভাবে মেনেই পিন্টুর চিকিৎসা করা হয়েছে। মৃত্যুর দিন সকালে নাসির উদ্দিন পিন্টু সুস্থ ছিলেন। সকালে তিনি স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করেন। সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় দিকে তিনি তার চুলে কলপ লাগাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গেই পাশে থাকা একজন বন্দি তার বুকে ব্যাথার কথা জানালে কারা কর্তৃপক্ষ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে বন্দিদের চিকিৎসায় নিয়োজিত কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।
ওই ডাক্তারের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বেলা ১২টা ১২ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন পিন্টু।
কারা সূত্রে আরো জানা যায়, নাসির উদ্দিন পিন্টু একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য হওয়ায় প্রাপ্য সব কারা সুবিধা ভোগ করতেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো।
পূর্ব নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের তারিখ ছিল ২৬ এপ্রিল। তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকায় চিকিৎসা প্রদানকে গুরুত্ব দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
পিন্টুকে কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় কারা কর্তৃপক্ষ রামেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে কারাগারের ভেতরে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২৩ এপ্রিল চিঠি দেয়। চিঠিতে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ কারা অভ্যন্তরে এসে পিন্টুকে চিকিৎসা করার বিশেষ অনুরোধ করা হয়।
চিঠি দেওয়ার পর ২৫ এপ্রিলের মধ্যে পিন্টুর চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কারাগারে কোনো চিকিৎসক আসেননি। বন্দির সুচিকিৎসার কথা ভেবে কারা কর্তৃপক্ষ পিন্টুকে ২৬ এপ্রিল রামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। ১১ মে দাঁতের চিকিৎসাসহ কার্ডিওলজি, সার্জিক্যাল ও অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞদের দেখানো হয়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ তাকে নতুন কোনো ওষুধ না দিয়ে বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে বলেন।
তদন্ত সূত্রে আরো জানা যায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হামপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৬ এপ্রিল কারাগারের পাঠানো চিঠি পান। চিঠি পাওয়ার পর হাসপাতালের পরিচালক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ‘প্লিজ ডিসকাস’ লিখে ওই হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক রইচ উদ্দীনকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই চিকিৎসক জরুরি নির্দেশ সত্ত্বেও ২৬ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত বিষয়টির প্রতি কোনো গুরুত্বই দেননি। এ অবস্থায় চিকিৎসক রইচ উদ্দীন পরিচালকের দেওয়া লিখিত ওই নির্দেশনা ছাড়াই হঠাৎ করে ২ মে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পিন্টুর চিকিৎসা দেবেন মর্মে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সূত্র আরো জানায়, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে, নির্দেশনা প্রদান করলেও ওই চিকিৎসক হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। আলোচনা ও কাগজ ছাড়াই কারাগারে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসক না আসায় বন্দির সুচিকিৎসার কথা ভেবে পিন্টুকে নিজ উদ্যোগেই রামেক হাসপাতালে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়েছে বলে জানান। এরপর তিনি কোনো কথা না বলে চা খেয়ে চলে আসেন।
কিন্তু রইচ উদ্দীন ৩ এপ্রিল পিন্টুর মৃত্যোর পর বিভিন্ন টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার কাছে বলেন যে, পিন্টুর চিকিৎসার জন্য কারাগারে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ প্রবেশ করতে দেয়নি। এ অভিযোগকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মিথ্যা বলে অভিহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই