ছাত্রী উত্যক্ত করা সেই ছাত্রলীগকর্মী বহিষ্কার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ছাত্রীকে উত্তক্ত করায় এক ছাত্রলীগকর্মীকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে। আহত ছাত্রলীগকর্মীর নাম নাজমুল। মঙ্গলবার বিকেলে চাংখারপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় মারামারির ছবি তোলায় এক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এদিকে বুধবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নাজমুলকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান বাসে ফেরার পথে উত্তরন বাসে উচ্চস্বরে গানের সঙ্গে নাচছিল শিক্ষার্থীরা। এসময় চন্দ্রমূখী বাস থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল উত্তরন বাসে ওঠার চেষ্টা করেন। বাসের গেটে দাড়িয়ে থাকা কয়েকজন ছাত্রীকে ধাক্কা দেয়ায় তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয় উত্তরন বাসের শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে জবি ছাত্রলীগকর্মী আলাউদ্দিন ও চঞ্চল সহ দশ বারোজন শিক্ষার্থী নাজমুলকে মারধর করে। এসময় বাসের দোতালা থেকে ছবি তোলেন বাংলা ট্রিবিউনিরে সাংবাদিক রোহান। পরে ছাত্রলীগকর্মীরা রোহানকে ভয় দেখিয়ে তার মোবাইল থেকে ছবি মুছে ফেলতে বলে। রোহান বলেন, ছবি না মুছলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় ছাত্রলীগকর্মীরা। এক পর্যায়ে কৌশলে কয়েকটি ছবি রেখে বাকি ছবিগুলো মুছে ফেলেন তিনি।

এদিকে আহত নাজমুল ছাত্রলীগ করলেও পিঠ বাঁচানোর জন্য তাকে ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে অস্বীকার করেছেন জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। নাজমুলকে ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বুধবার সংশ্লিষ্ঠ গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জবি ভিসি বরাবর অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা। সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, নাজমুল ছাত্রলীগের কেউ না। তার অপকর্মের জন্য ছাত্রলীগ দায়ি নয়।

অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিক রোহান বলেন, ঘটনার পর উপস্থিত কয়েকশ শিক্ষার্থীর সামনে নাজমুল নিজেকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন। তার বক্তব্য নিয়েই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

নাজমুল বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে তার কোন পদ নেই। তবে তিনি ছাত্রলীগ করেন।

এ বিষয়ে জবি প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মাদ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নাজমুলকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তারাই নাজমুলকে নিয়ে প্রক্টর অফিসে এসেছেন। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোগ যে কেউ দিতে পারে। অভিযোগ করতে তো আর নিষেধ করা যায়না।

najmul

নাজমুলকে বহিষ্কার: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাজমুলকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বিব্রত জবি ছাত্রলীগ: এদিকে জবি ছাত্রলীগ নেতারা নাজমুলকে ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে অস্বিকার করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নাজমুলকে বহিষ্কার করায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে জবি ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম কথা বলতে চাননি। পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের কোন কর্মীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলে পিট বাঁচানোর জন্য তাকে কর্মী হিসেবে অস্বীকার করে থাকেন নেতারা। এর আগে জবি শাখার এক সহ-সম্পাদককে অস্বীকার করেছিলেন জবি ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক।



মন্তব্য চালু নেই